কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালী মহল এলাকাভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বুধবার (৮ মে) বিটিআরসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে আমানুর রহমান নামে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের এক বাসিন্দার অভিযোগের জবাবে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেউ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব খাটাতে পারবেন না। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেন, তাহলে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হবো।
প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গণশুনানিতে বসেই খিলগাঁওয়ের ওই বাসিন্দাকে আগামী সাত দিনের মধ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেন জুনাইদ আহমদে পলক।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী খিলগাঁও বিটিসিএল অফিসের ডিএমডিকে ফোনে যুক্ত করলে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগকারী গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার কথা দেন। বিটিসিএলের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের বিটিসিএল ইন্টারনেটের চাহিদা থাকায় আমার জীবন ধন্য। আমি খোঁজ নিয়ে ওই অঞ্চলে সংযোগ থাকলে এক ঘণ্টার মধ্যে সংযোগ দেবো। আর না থাকলে দুইদিন সময় লাগবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে পঞ্চমবারের মতো এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়। গ্রাহকের সুরক্ষায় বিটিআরসি সবসময় সোচ্চার রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পর আগামী বছর ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেও গণশুনানি হবে বলে জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
গণশুনানিতে আরেকজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নেওয়ার পরও তার সিম দেওয়া হয়নি। তার এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি মহাপরিচালক খলিল উর রহমান জানান, একবার আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর তিন ঘণ্টার মধ্যে আবার ছাপ দিলে তা যাবে না। বায়োমেট্রিকসংক্রান্ত কোনো প্রতারণা হলে বিটিআরসিতে অভিযোগ করতে হবে।
অবৈধ মোবাইল ফোন নিয়ে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ জানান, কারও কাছে আন-অফিসিয়াল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কোনো হ্যান্ডসেটই বন্ধ হবে না আপাতত। কারও যদি মনে হয় তার সেটটি অবৈধ তিনি সরাসরি বিটিআরসিতে এসে নিবন্ধন করে নিতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার রিয়াজ আহমেদ বলেন, অবৈধ মোবাইল ফোন থেকে থাকলে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে ডিসকানেক্ট করা হবে। আপনারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় বৈধ সেট কিনবেন। রেজিস্টার্ড না হলে সরাসরি বিটিআরসিতে এসে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করবো। সব মোবাইলই নেটওয়ার্কে কাজ করবে, কোনোটাই বিচ্ছিন্ন হবে না।
হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়েও নানা অভিযোগ উঠে আসে। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের মেয়াদ না থাকা এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার পরিধি বাড়ানোর বিষয়টি বেশি আলোচিত হয়। গ্রাহকরা মোবাইলের রিচার্জ ও ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ আনলিমিটেড করার দাবি তুলে ধরেন শুনানিতে।
জবাবে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারলে খলিলুর রহমান বলেছেন, এখন মোবাইল অপারেটররা সীমিত পরিসরে আনলিমিটেড প্যাকেজ দিলেও গ্রাহক প্রণোদনায় তারা এ পরিসর বাড়াবেন বলে আশা করি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের শুনানিতে নিবন্ধিত প্রশ্নকারী ছিলেন ৩ হাজার ২৫ জন। দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ গণশুনানিতে অর্ধশতাধিক প্রশ্নকারী প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক, দেশের ভোক্তা সংঘ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুনানিতে অংশ নেন।