২০২১-২২ অর্থবছরে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী-গরীবপুর সড়কের দেড় কিলোমিটার সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কাজটি পায় যশোরের ঠিকাদার ইসরাইল ট্রেডার্স। গতবছর নভেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়। যা শেষ হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল।
কাজের সময়সীমা ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় সড়ক সংস্কারের কাজটি দেখভালের দায়িত্ব পায় উপজেলা এলজিইডি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার উপজেলা প্রকৌশলী জুলহাস উদ্দিনকেও জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া দিয়ে কাজ করছিল ঠিকাদার। বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানালেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই কাজ শেষ করা হয়। ফলে কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ।
ক্ষোভে প্রতিবাদস্বরূপ স্থানীয় লোকজন নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানের কিছু অংশে পাতলা কার্পেটিংয়ের আবরণ তুলে ফেলেছেন এবং সড়কের সেই অংশের ছবি ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
সিংহঝুলী ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য তাসলিমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন এ সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে, তখন আমি অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে কাজের তদারকি করতে আসি। এসে রাস্তা সংস্কারের কাজে নিম্নমানের ইট-পাথর বিটুমিন দেওয়ার সত্যতা পাই। পরে বিষয়টি নিয়ে রাস্তাটি সংস্কার কাজের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলি। পরে তারা জানায়, এখনো কাজ শেষ হয়নি। সঠিকমানে কাজ বুঝে না পেলে আমার থেকে কাজ বুঝে নিয়েন। কিন্তু ঠিকাদার অনিয়ম করে কাজ শেষ করেছে। এখন আর তাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তার মোবাইলও বন্ধ।
সিংহঝুলী ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ি খাঁ পাড়ার বাসিন্দা রফি বিশ্বাস, লিটন মল্লিক, আসাদ খানসহ ছয়-সাতজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এত টাকা খরচ করে রাস্তা করেছে, সেখানে ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে সব টাকা জলে গেলো। হাত দিয়ে রাস্তার কার্পেটিং তোলা যাচ্ছে। সেখানে ভারি যানবাহন কীভাবে যাবে। নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ব্যবহার করে এ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী করে ঠিকাদার চলে গেছে। সরকারের কাছে এ অনিয়মের বিচার চাই।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা এলজিইডি উপ-সহকারী প্রকৌশলী বুলবুল আহমেদ বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ সড়কের দেখভালের দায়িত্বে আমি নেই। এর দায়িত্বে প্রকৌশলী জুলহাস উদ্দিন, তিনি অসুস্থ। অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই সড়কের কয়েক জায়গায় আমরা নতুন করে কার্পেটিং দিয়েছি। আশা করি আর সমস্যা হবে না।
যশোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিছুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। এরই মধ্যে ওই সড়কটি আমি সরেজমিনে দেখেছি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেছি। বিষয়টি বর্তমানে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। পরীক্ষার জন্য সড়কের বিটুমিন ও কার্পেটিং তুলে এনে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা চলছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করেছে। এরপরও ঠিকাদার দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।