লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় চার কিলোমিটার জায়গা খানাখন্দে ভরে গিয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে সড়কটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। নানা সময় ঘটছে দুর্ঘটনাও।
লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাটগ্রাম বাইপাস মোড়, কলেজ মোড়, বাউরা বাজার, হাতীবান্ধার বড়খাতা বাজার, হাতীবান্ধা বাজার, পারুলিয়া বাজার, কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি, ভুল্ল্যারহাট, আদিতমারী উপজেলার পলাশী, বুড়িরবাজার মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এলাকাসহ সড়কের ১৭টি স্থান চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই খানাখন্দগুলো পানিতে ভরে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এই স্থানগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কেউ হারাচ্ছে প্রাণ, কারও হচ্ছে অঙ্গহানি। এভাবেই চলছে প্রায় দুই বছর।
বাস-ট্রাক শ্রমিকরা জানান, মহাসড়কটি ভালো থাকলে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন লাগে পাঁচ ঘণ্টা। খুব সতর্কতার সঙ্গে মালবাহী ট্রাক নিয়ে এ মহাসড়কে চলতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। সড়কের বেহাল দশার কারণে পরিবহন শ্রমিকরা বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে মালামাল পরিবহন করতে আগ্রহী না।
সরকারি আদিতমারী জিএস মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক জাহিদ ইমাম শান্ত বলেন, আদিতমারি শহরের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরে গেছে। এতে প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তিনি দ্রুত মহাসড়কটি সংস্কারের দাবি জানান।
এদিকে, হাতীবান্ধা উপজেলা সদরের হোন্ডা শোরুমের সামনে সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। পানি জমে থাকার কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে।
ওই শোরুমের পরিচালক সোহেল চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা সদরের এই সড়কের নানা স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। আর বৃষ্টি হলে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ট্রাকচালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন রংপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়ায় পাথর বহন করি। মহাসড়কের কয়েকটি জায়গা নষ্ট হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালাতে হয়। স্থলবন্দর থেকে বিভিন্ন জায়গায় মালামাল পরিবহনের জন্য রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি করছি।
বড়খাতা দোয়ানি মোড় এলাকার ট্রাকচালক ইউনুস মিয়া বলেন, এখন বুড়িমারী স্থলবন্দর যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগে এবং অধিক তেল খরচ হয়। তাই মালামাল পরিবহনে ট্রাক মালিকরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
বাসচালক শাহীন বলেন, মহাসড়কটির দুরাবস্থার কারণে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে বাসের যাত্রীও কমে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে বাস যাত্রীরা চলাচল করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময়ও লাগছে। এতে আমাদের আয়ও কমেছে। এখন বেশিরভাগ যাত্রীরা ট্রেনে করে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বকুল হোসেন বলেন, একদিকে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি, অপরদিকে মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহাল দশা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করার জন্য একমাত্র মহাসড়কটি সংস্কার প্রয়োজন। সড়কের কারণে অনেক সময় স্থলবন্দরে ট্রাক সংকট দেখা দেয়। বেশি চার্জ দিয়ে ট্রাক ভাড়া করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, জেলার ১৭টি স্থানের মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ চলমান। বর্তমানে পাটগ্রামের বাউরা বাজারের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি স্থানের সংস্কার কাজ হবে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কাজের গতি কমে গেছে। আশা করি, সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হবে। পাশাপাশি ঠিকাদার যাতে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।