ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া না বাড়ানো পর্যন্ত লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা (যাপ)। আজ শনিবার (৬ নভেম্বর) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া এ তথ্য জানান। ইতোমধ্যে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে লঞ্চ সরানো হয়েছে। এদিকে সদরঘাট এসে দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করেও তারা লঞ্চ পাননি। ফলে ঘাটে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
ঘাটে এসে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যাত্রী জিম্মি করে ভাড়া বৃদ্ধি অনৈতিক কাজ। তবে মালিক কর্তৃপক্ষের দাবি, ডিজেলের দাম বাড়ানোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
সোয়েব আহম্মেদ নামে এক যাত্রী বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির জন্য যাত্রীদের জিম্মি করে হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ করা বিবেকহীন কাজ। এ সিদ্ধান্ত বেলা ৩টায় না নিয়ে আরো আগে নিতে পারত। তা হলে আমরা ঘাটে এসে এই বিড়ম্বনায় পড়তাম না।
ব্যবসায়ী হায়দার আলী নামক এক যাত্রী বলেন, আমি ঢাকায় এসেছিলাম দোকানের জন্য শীতের কাপড় কিনতে। এসেই আটকা পড়েছি। দোকানের মাল কিনে গাটি বেঁধে বসে আছি, ফেরার উপায় নাই।
ওসমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, গতকাল থেকে জনপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধি করেছে মালিকরা। লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রেখে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারত। তা হলে হাজার হাজার যাত্রীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।
জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত কালকেই ছিল। সরকার আমাদের দাবি না মানায় আজ দুপুর ১২টা থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা তো পথের ফকির আমাদের পেটে কেন লাথি দেওয়া হয় বারবার? যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। জনগণের কথা কে ভাবে? কেউ ভাবে না।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় প্রতিটি লঞ্চে জ্বালানি বাবদ এক লাখ টাকা খরচ বেড়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগের ভাড়ায় এক দিন যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। তবে সেটা আর সম্ভব নয়।
জ্বালানি তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ায় লঞ্চের ভাড়া শতভাগ বাড়ানোর দাবিতে এবার ধর্মঘট শুরু করেছেন লঞ্চ মালিকরা। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার প্রতিবাদে শুক্রবার পল্টন কার্যালয়ে বৈঠক করেন লঞ্চ মালিকরা। বৈঠকে বাস ও ট্রাক ধর্মঘট শুরু হলেও লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা। শনিবারের মধ্যে ভাড়া বাড়ানো না হলে তারাও ধর্মঘটের পক্ষে মত দেন। তবে এদিন ভাড়ানোর সিদ্ধান্ত না আসায় লঞ্চ মালিকরা ধমর্ঘটের ডাক দেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার লঞ্চ মালিকরা এক চিঠিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় লঞ্চের ভাড়া শতভাগ বাড়ানোর দাবিতে বিআইডব্লিউটিএ-কে আলটিমেটাম দেন।
চিঠিতে লঞ্চের ভাড়া প্রথম একশ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৪০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ১ টাকা ৪০ পয়সার পরিবর্তে ২ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় তারাও ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দেনন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যাত্রীবাহী লঞ্চের যাত্রীভাড়া বাড়ানোর লক্ষ্যে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএতে বহুবার আবেদন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ৮ নভেম্বর ভাড়া নির্ধারণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি সভা আহ্বান করেন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন