সরকার ঘোষিত লকডাউন অমান্য করে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলছে দূরপাল্লার বাস। পুলিশ বলছে, রাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা যানজট এড়াতে দুই-একটি বাস চলতে পারে। তবে অধিকাংশ বাসই বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের মতে, শুধু পুলিশ নয়, বাস মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীরা সচেতন না হলে সবকিছু পুলিশের রোধ করা সম্ভব হয় না।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩১ হাজার ১১৪টি যানবাহন সেতু দিয়ে পার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪ টাকা। সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাস পারাপার হয়েছে তবে সেটি তুলনামুলক কম। ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ১৩শ’র বেশি যাত্রীবাস পার হয়েছে।
অন্যদিকে, সরেজমিনে মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ তল্লাশি থাকলেও ভোরের দিকে বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার কিছু বাস সেতু পার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও দিনভর ঢাকা-রংপুর তারাগঞ্জ লেখা থ্রীস্টার পরিবহন, ঢাকা-বগুড়া লেখা রাকিব পরিবহন, সিরাজগঞ্জ-ঢাকা অভি, সিরাজগঞ্জ-ঢাকা এসআই, ঢাকা-রংপুর লেখা শ্যামলী পরিবহন, ঢাকা-নওগাঁ লেখা অন্তর পরিবহন, ঢাকা-কুষ্টিয়া লেখা লালন পরিবহন, শিউলি পরিবহন, জেআর রাফাত পরিবহন, আল-ইমরান পরিবহন, সুরমা পরিবহন ও আজাদ পরিবহনসহ অনেক দূরপাল্লার বাস মহাসড়কটিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে যাত্রী না থাকলেও ঢাকামুখী বাসগুলোতে যাত্রী ছিল ভরপুর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেতুতে দায়িত্বরতরা জানান, দিনের বেলায় কমসংখ্যক বাস চলাচল করলেও রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এবং ভোরের দিকে একটু বেশি বাস সেতু পার হয়ে যায়।
মহাসড়কের পাশে স্থানীয় দোকানদারা জানান, বাসগুলো যখন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা-বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সেতুর পশ্চিম পাশে আসে তখন পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় যাত্রীদের সাথে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ বাসগুলোকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে পড়ে।
আর যাত্রীরা বলছেন, বাসগুলো সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে না। সেতু পার হয়ে গাজীপুর চন্দ্রা পর্যন্ত যাচ্ছে। এরপর বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ঢাকায় যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে মহাসড়কে অবাধে দূরপাল্লার বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তবে রাতে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো সেতুর পশ্চিমপাড়ে আটকে দিলে যানজটের সৃষ্টি হয়। যে কারণে দুই-একটি বাস ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু মানুষ বুঝে হোক বা না বুঝে হোক ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছেন।
কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রতিদিন অসংখ্য বাস ফেরত পাঠানো হচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে। আজকেও অন্তত ১৫টি বাস আটকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মতে, বিভিন্ন জেলা থেকে যদি বাস না ছাড়ত তবে এ সমস্যা হতো না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সচেতনতা। যদি বাস মালিক-শ্রমিক বা যাত্রীরা নিজেরা সচেতন না হয় বা পুলিশকে সহায়তা না করে তবে পুলিশের একার পক্ষে সব সম্ভব হয়ে ওঠে না।