দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ আরও একধাপ এগিয়েছে। সগৌরবে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের হাতছানি দিচ্ছে স্বপ্নের এ উড়াল সড়ক। বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো অংশের নিরবচ্ছিন্ন কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। এদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ৫৮২ ও ৫৮৩ নম্বর পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্টের শেষ অংশটি বসানো হয়। এর মধ্যদিয়েই নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ১লা আগস্ট প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা শুরু করা হয়। গত বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ওই অংশে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়।
২০১৮ সালের ১লা আগস্ট আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার মেট্রোরেলের দ্বিতল সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৭শে জানুয়ারি এ অংশের সর্বশেষ সেগমেন্ট যুক্ত করে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ সম্পন্ন হলো। এমএএন সিদ্দিক জানান, সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে ট্রেন।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সবশেষ গার্ডার স্থাপন করা হয়। ফলে এমআরটি সিক্স লাইনের সব গার্ডারের কাজ শেষ। পাশাপাশি কার্জন হল পর্যন্ত রেললাইন বসানো হয়েছে। এপ্রিল মাসের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি লাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এমআরটি সিক্স লাইনের কাজ শেষ হয়েছে ৭৪ ভাগ। মিরপুর এলাকায় কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী এপ্রিলেই এ এলাকায় মেট্রোরেলের সব সরঞ্জাম সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে ২০১২ সালে ঢাকায় যানজটমুক্ত কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের আওতায় এবং জাপানের সহায়তায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্প এমআরটি লাইন-সিক্স এর অনুমোদন দেয়া হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ২০২৪ সালের মধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণকাজও অন্তর্ভুক্ত। তবে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশ আগেই চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে যানজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণসহ বিভিন্ন সমস্যায় প্রকল্প এলাকার ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উল্লেখ যে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে অধিকাংশ রেলস্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। মেট্রো ট্রেন ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩৯ মিনিট।