রফতানিমুখী পণ্য পরিবহন নিরাপদ করতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোকে ভিডিও সার্ভিলেন্সের আওতায় নিয়ে আসছে সরকার। এ উদ্যোগ সফল হলে পণ্য পরিবহন ছাড়াও মহাসড়কে ডাকাতি, চুরিসহ অন্যান্য অপরাধও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে রাজধানীর নিকটবর্তী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার জুড়ে ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। যেটা নিয়ন্ত্রিত হবে মেঘনা ঘাটে স্থাপিত হাইওয়ে পুলিশের কমান্ড ও মনিটরিং সেন্টার থেকে।
সেখানে ডাটা সেন্টারের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত সপ্তাহে এ নিয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠকও করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রফতানিমুখী পণ্য পরিবহনের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত। প্রায়ই মহাসড়কে এসব পণ্য চোর-ডাকাতের কবলে পড়ে। হাইওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে এসব চোর ডাকাতকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু পরে তারা আবার আদালত থেকে বেরিয়ে যায়।
সেজন্য মহাসড়কে রফতানিমুখী পণ্য চুরির ধারাটিও পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ মাসেই (ফেব্রুয়ারি) আবার এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে পুলিশ ছাড়াও রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদন ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
মহাসড়কে চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ২০২২ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার অগ্রগতি নিয়ে গত মাসে (জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সভায় ঢাকা চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ বিষয়ে একটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে।
যার আওতায় রাজধানীর নিকটবর্তী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হবে। এরইমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫২ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেদের জুরিসডিকশন অনুযায়ী সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসড়কে ভিডিও সার্ভিলেন্স (সিসিটিভি) প্রকল্পের তদারক কর্মকর্তা এবং হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. বরকত উল্লাহ খান বলেন, রফতানিমুখী পণ্য পরিবহন নিরাপদ করা জরুরি। যার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত। ব্যবসায়ীদের হিসাবে প্রতিবছর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য চুরি ও ডাকাতির শিকার হচ্ছে। এছাড়াও মহাসড়কে জান-মাল নিরাপদ রাখতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
আর রাজধানীর নিকটবর্তী সাইনবোর্ড এলাকা থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত ক্যামেরা বসানো হলে এ মহাসড়ক পুলিশের পুরো নজরদারির মধ্যে চলে আসবে। ২৫০ কিলোমিটারে ৪৫০টি ক্যামেরা পুলে প্রায় দেড় হাজার ক্যামেরা বসানো হবে। ফেনী পর্যন্ত মাটির নিচে অপটিক্যাল ফাইবার বসানো হয়েছে।
মার্চে সাইনবোর্ড থেকে দাউদকান্দি ও আগামী জুনের মধ্যে সবগুলো ক্যামেরা চালু করার চেষ্টা চলছে। এ জন্য সরকারের খরচ হবে ১২৯ কোটি টাকা। এছাড়াও এটা পরিচালনায় প্রতি মাসে খরচ হবে প্রায় ১ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ক্যামেরাগুলো অত্যাধুনিক। এর সঙ্গে আর্টিফিসিয়ালি ইনটেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে। এতে অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়াও যানজট নিরসনসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড নজরদারিতে নিয়ে আসাও সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমেদ চৌধুরী বলেন, রফতানিমুখী পণ্য পরিবহনসহ নিরাপদ করা সবার জন্য জরুরি। দীর্ঘদিন এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেন-দরবার করেছেন তারা।
পুলিশের ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, একই সঙ্গে রফতানিমুখী পণ্য চুরি ও ডাকাতির শাস্তির জন্য আইনের ধারা বদলাতে হবে। সাধারণ চুরি আর রফতানিমুখী পণ্য চুরি ও ডাকাতি এক জিনিস নয়। বর্তমান আইনের ধারা অনুযায়ী মামলা হয়।
কয়দিন পর তারা আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে লিপ্ত হয়। এ মাসেই এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলেও জানান তিনি।