ঢাকা: যত বেশি নারী চালক নিয়োগ দেওয়া হবে, সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি ততটাই কমবে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নারী গাড়িচালকেরা নিয়ম মেনে চলেন, ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালান। তাঁরা নেশা করেন না, দায়িত্ব পালনের সময় মোবাইল ফোনে কথাও বলেন না।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা চাই ব্র্যাকের মতো আরও প্রতিষ্ঠান ড্রাইভার (গাড়ি চালক) প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীর স্বনির্ভরতা অর্জনে এগিয়ে আসুক। গাড়ি চালনায় ৬ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর লাইসেন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কোনো নারী যদি চাকরি না পান, তাহলে এই উদ্যোগ সার্থক হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে. এম আলী আজম বলেন, গণপরিবহনে ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার যে তথ্য উপস্থাপন করা হলো, তা উদ্বেগজনক। ব্র্যাকের পেশাদার নারী গাড়ি চালক প্রশিক্ষণের কর্মসূচিটি অত্যন্ত সময় উপযোগী। সরকারি চাকরিতে নারী গাড়ি চালকদের নিয়োগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেমবন বলেন, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নের সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সরকারের বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে ২৫৮ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে। ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাস্তবায়নের সহায়তা দিতে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে যার অধীনে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্র্যাককে জড়িত করা আশ্বাস দেন।
সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, সড়ক নিরাপত্তা জন্যে বিশেষ করে নারীবান্ধব সড়ক ও গণপরিবহন গড়ে তুলতে সরকারের সঙ্গে ব্র্যাক একযোগে কাজ করে যাবে। এজন্য ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলটিকে একটি অতি উচ্চমানের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এর ব্যাপ্তি বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে ব্র্যাকের।
এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্র্যাকের প্রশাসন এবং সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ব্র্যাক সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির অবদান উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ফজলে হাসান আবেদ, কেসিএমছি’র দিকনির্দেশনায় ২০০১ সাল থেকে ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে কমিউনিটি সড়ক নিরাপত্তা অভিযান, ড্রাইভার প্রশিক্ষণ এবং গণপরিবহনে নারীদের নিরাপদ চলাচল প্রকল্প চালু করা হয়। এ উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি সাধারণ সড়ক ব্যবহারকারী, ৫ লাখ ৬১ হাজার ছাত্র/ছাত্রী এবং ৫ হাজার ৪০০ শিক্ষককে নিরাপদ সড়ক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এছাড়াও ১১ হাজার ৫ শত বাণিজ্যিক গাড়ি চালক, ৬ হাজার ৭০০ জনকে মৌলিক গাড়ি চালনা, ২ হাজার ২০০ নারী গাড়ি চালক, ২০১৩ জন মোটরসাইকেল চালক এবং ৩৬৩ জনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পরিচালক নাজমুল সরকারের বিভিন্ন সড়ক নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ব্র্যাকের জড়িত থাকার উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, সম্প্রতি গৃহীত বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সরকারের বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে কাজ
করার সুযোগ পাওয়ার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক কর্তৃক বাস্তবায়িত সেইফ রোড ফর উইমেন অ্যান্ড গালর্স প্রকল্পের কার্যক্রমের উপর পরিচালিত লেসেন লার্নড স্টাডিতে প্রাপ্ত তথ্য ফাইন্ডিং উপস্থাপন করা হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনিস্টিটিউট ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডি পরিচালনা করেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সড়ক ও সড়ক পরিবহনে নারীদের যাতায়াত নিরাপদ করণে নারী যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি তথা দেশে উন্নয়নে বেগবান হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহর সভাপতিত্বে সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসচ) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ।