বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, বিমানের দক্ষ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানগণের মাধ্যমে এই প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের সি-চেক দেশেই সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বিমানের আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে ছয় লক্ষ মার্কিন ডলার। এবছর আরো ১টি ও আগামী বছরে আরো ৪টি ড্রিমলাইনারের সি-চেক দেশেই সম্পন্ন হবে বিধায় আরো ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সাশ্রয় হবে বিমানের।
আজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর প্রধান কার্যালয় “বলাকা”-তে ড্রিমলাইনারের সফল সি-চেক সমাপনী ও কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকে চীনের উহান শহরে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের উদ্ধারে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিমান ক্রু দের সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সি-চেক একটি দীর্ঘমেয়াদী, জটিল এবং উচ্চ কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন চেক যাতে উড়োজাহাজের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্মোচনের মাধ্যমে বিশদভাবে নিরীক্ষান্তে উড়োজাহাজকে নভোযোগ্য (airworthy) করা হয়। বোয়িং-৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনারের সি-চেক প্রতি তিন বছর পর পর সম্পন্ন করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ আগস্ট, ২০২১ থেকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’-এর প্রথম সি-চেক কার্যক্রম শুরু করে ১০ কর্ম দিবসে এর সফল পরিসমাপ্তি করে বিমান।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের খুব কম এয়ারলাইন্সেরই ড্রিমলাইনারের মতো আধুনিক উড়োজাহাজ সি-চেক করার সক্ষমতা রয়েছে। এর আগে বিমানের যে কোন ধরনের নতুন উড়োজাহাজের সি-চেক জার্মানি, ইতালি অথবা সিঙ্গাপুরে বিদেশি এমআরও (Maintenance, Repair & Overhaul Organization)-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। নিজস্ব জনবল ও ব্যবস্থাপনায় ড্রিমলাইনারের সি-চেক সম্পন্ন করা বিমানের সক্ষমতা বৃদ্ধির উজ্জ্বল উদাহরণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করার ফলেই এই সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বিমানের বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের চেক দেশেই সম্পন্ন করার জন্য দক্ষ জনবল ও প্রকৌশল অবকাঠামো তৈরিতে বিমানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বিমান তার এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের স্বনির্ভর ও উন্নত “সোনার বাংলা” বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
করোনার কারণে চীনের উহানে অবরুদ্ধ বাংলাদেশীদের উদ্ধারে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিমানের কর্মীদের প্রশংসা করে মাহবুব আলী বলেন, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সব সময়ই দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করে। এই কোভিড-১৯ মহামারীর সময়েও তার ব্যত্যয় হয়নি। বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুগণ দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে দায়িত্ব পালন করেছেন। অপারেশন সীমিত করা হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্মীদের আন্তরিকতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের কারনেই তখন সারা বিশ্ব থেকে আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাইনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালে মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোকাম্মেল হোসেন।