বরিশালের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পরেছেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত ১১টা থেকেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে বরিশাল জুড়ে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। পুলিশ কমিশনার জানান, আজ সকালে নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাস টামিনাল এবং লঞ্চঘাট শ্রমিকরা সকল রুটের বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকদের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পরেন সাধারণ যাত্রী ও নগরবাসী।
এছাড়া, ওই ঘটনায় সিটি মেয়র সুস্থ থাকলেও বেশ কয়েকজন এখনো গুরুতর অবস্থায় শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নগর জুড়ে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরক্ত সদস্য মোতায়েন করা হলেও চলছে না তেমন কোনো যানবাহন। পুরো বরিশাল জুড়ে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ নগরীর অবৈধ ব্যানার-বিলবোর্ড অপসারণ চলছিল। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিসিসি কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের বিলবোর্ড অপসারণ করতে গেলে তাদের বাধা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। একপর্যায়ে তিনি বিসিসি কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং সরকারি কাজে বাধা দেন। এ নিয়ে বাদানুবাদের একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা আমাদের কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘রাতে ব্যানার অপসারণে বাধা দেওয়ায় কিছু লোক আমার ওপর চড়াও হয়। তখন তাদের সঙ্গে কয়েকজন লোক ছিলো। গেট আটকে আমি বাসার ওপরে উঠে যাই। হঠাৎ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৬০-৭০ জন লোক এখানে আসে। তারা তখন খুব উচ্চস্বরে আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের নাম ধরে গালিগালাজ করছিলো। আমি নিচে নেমে একসময় কথা বলছিলাম। এসময় আমার পেছন দিকে লোকজন আসতে শুরু করে, তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে ঘিরে ধরা হচ্ছে। তখন আনসার সদস্যদের ইশারা দিলে তারা আমার কাছে চলে আসে। আনসাররা বাঁশি বাজালেও যখন তারা সরছিলো না তখন আনসার সদস্যরা ফোর্স করছে। তখন যে যার মতো করে দৌড় দেয়।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে গুলি করার অর্ডার (ডেসপাসের অর্ডার) দেওয়া হয়নি, তবে আমার বাসার সামনে যখন আমাকে ঘিরে ধরা হবে তখন আনসার সদস্যরা তো আমাকে সেভ করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ ব্যানার অপরসারণ আমাদের রেগুলার কাজ। এতে শহর পরিষ্কার হয়। আমি নিজের করা ব্যানারটিও খুলে ফেলেছি। যখন উপজেলা পরিষদের সামনে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা আমাকে বললো যে গুলি হচ্ছে, তখন আমি বাসায়। সিটি করপোরেশনের সিও, মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলো। আমি তাৎক্ষণিক একাই ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলমেট খুলে কর্মীদের বললাম, তোমরা গেটের বাইরেই দাঁড়াও কেউ ভেতরে যেও না। এরপর একা থানা কাউন্সিলের গেট দিয়ে যখন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারা সে কথা শুনে অনবরত গুলি করা শুরু করলো। এরমধ্যে পেছনে যে নেতা-কর্মীরা ছিলো তারা সকলে এসে মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো। চলে আসার পরে শুনলাম আবারও গুলি হয়েছিলো। দফায় দফায় গুলি বর্ষণে করপোরেশনের কর্মচারীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করি।’
শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনায় আহত ২৩ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরের চোখে গুলি লেগেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরও কয়েক জন জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আরও জানান, সদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে উদ্ভুত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক মোকাবিলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে। তবে তাদের সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি। সড়ক ও নৌপর্থে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সাঁটানো অবৈধ ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সিটি মেয়রসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর পুলিশ ও আনসারের রাতভর তিন দফা গুলি ও দফায় দফায় লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্যানেল মেয়র, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের পদবিধারী নেতাসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। এছাড়া, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন জেলা আনসার কমান্ডারসহ পুলিশের দুইজন সদস্য।
ঘটনার পরপরই সিটি করপোরেশনে পরিছন্নকর্মীর উপজেলা পরিষদের সামনে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ও ট্রলি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা আটকে দেয়। তখন থেকেই সড়ক যোগযোগ বিছিন্ন থাকে।