দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শ্রমিকরা ঢাকার দিকে যাত্রার দুর্ভোগ কমাতে এক দিনের জন্য ছাড় দিয়েছে সরকার। আজ শনিবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব জেলার ডিসিদের মৌখিকভাবে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক জেলার ডিসি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকরা যেভাবে ঢাকার দিকে ছুটেছে তাতে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তাই সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সাময়িকভাবে একদিনের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকরা যেভাবে রাস্তায় নেমে চলে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়েছে। বিষয়টি দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শ্রমিকদের সুন্দরভাবে ঢাকায় আসার জন্য গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে। তাই আমরা আপাতত এই ছাড়া দিয়েছি। আগামীকাল (রবিবার) দুপুর ১২টার মধ্যে কোনো গণপরিহনকে বাধা দেওয়া হবে না।’
এদিকে, ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস কল-কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে সারা দেশ থেকে শ্রমিকরা ঢাকার দিকে ছুটতে থাকে। এই বিষয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে সাময়িকভাবে গণপরিবহন খুলে দেওয়ার সুপারিশ আসে। অন্যদিকে, গণপরিবহন ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও সরকারকে তাগিদ দেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ৬৪ জেলার ডিসিদের একদিনের জন্য গণপরিবহন না আটকানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার ডিসি রাত ৯টার দিকে বলেন, ‘শ্রমিকদের ঢাকামুখী স্রোতের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটা পালন করছি। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যে অমানুষিক কষ্ট করে ঢাকার দিকে ছুটছিলেন তা সত্যি দুঃজনক। বিষয়টিতে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল।’ সিলেট বিভাগের একজন ডিসি কালের কণ্ঠকে বলেন, কারখানা খুললে শ্রমিকদের পরিবহন বিষয়টি অবশ্যই চিন্তা করা উচিত ছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা বলেছে শুধু ঢাকায় থাকা শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করা হবে। সরকার সেটাই বিশ্বাস করেছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তো আমাদের জন্য নতুন নয়। তাই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এটা বুঝা উচিত ছিল। তাহলে এই সমালোচনায় পড়তে হতো না।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মূল ধারার গার্মেন্টস মালিকরা গ্রামে থাকা শ্রমিকদের ঢাকায় ডাকেননি বলে আমাদের জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতারা সরকারকে বলছে, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ-এর বাইরেও অনেক কারখানা আছে। সেসব কম্পানি থেকেই মূলত শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে বলায় এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নিলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বুঝতে পারেননি। এটা অভিজ্ঞ আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য নয়। এই ঘটনায় সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হলো।’