বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের অধীনে চালু হলো ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ সেবা। আপাতত ‘ঘাটারচর-কাঁচপুর’ রোডে এই সেবা চালু হলো। আজ রবিবার মোহাম্মদপুরে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর উদ্বোধন করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সড়কে যদি শৃঙ্খলা না আনতে পারি সকল উন্নয়নের ম্লান হয়ে যাবে। আগামী বছর মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। ঢাকা শহরের মোটরসাইকেলের অনেক শৃঙ্খলা এসেছে। তবে রাজনৈতিক কর্মীরা মোটরসাইকেলে নিয়ম মানতে চান না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এটা আমদের জন্য নতুন দিগন্ত। ঢাকা শহরে ৯ হাজার ৭২৭টি বাস চলাচল করে। সড়কে একটি বাসের সঙ্গে আরেকটি বাসের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। মাস শেষে কোনো লাভ হয় না মালিকেদের। এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে, যানজট তৈরি হচ্ছে। সড়কের শৃখলা আনতে গেলে বাস রুট রেশনালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। তবে এটা বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা প্রায়ত মেয়য় আনিসুল হকের স্বপ্নে পূরণে শুভসূচনা করতে যাচ্ছি। গাড়ির চালকেরা এতদিন গালি পেয়েছে, অবজ্ঞা হতে হয়েছে। আজ তারা সম্মান পেয়েছে। তারা এখন মাসিক বেতন পাবে। এখন থেকে এভাবে বাস সেবা চলবে। সড়কে বাসের কোনো প্রোতিযোগিতা বা ঠেলাঠেলি করা যাবে না। কোনো অনুমোদনহীন বাস আর চলতে পারবে না। যে বাস যে রুটের পারমিট নিয়েছি সেই বাসকে সেই রুটে চলতে হবে। অন্য কোনো রুটে চলতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নীলিমা আখতার ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, প্রাথমিক পরিকল্পনায় রাজধানীর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত একটি রুটে ১৫৫টি বাস চলার কথা ছিল। তবে এখন ট্রান্স সিলভা কম্পানির ২০টি এবং বিআরটিসির ৩০টি দোতলা বাস নিয়ে চালু হচ্ছে ‘ঢাকা নগর পরিবহনের’ যাত্রা।
এই রুটে বর্তমানে রজনীগন্ধা, মালঞ্চ, মিডলাইন, সিটি লিংকসহ মোট ১৩টি রুটের ৩৮২টি বাস চলাচল করে। বাস রুট রেশনালাইজেশনের ধারণা অনুযায়ী, ঢাকা নগর পরিবহনের অধীনে নেই এমন কোনো কম্পানির বাসের এই পথে চলার সুযোগ নেই। তবে এখন ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত যেসব বাস চলছে তা সবই থাকছে। অর্থাৎ এসব বাসের সঙ্গে নগর পরিবহনের আরো ৫০টি বাস এই রুটে যুক্ত হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে যে ৫০টি বাস চলাচল করবে, প্রতিটির গায়ে ঢাকা নগর পরিবহন লেখা থাকবে। দ্রুতই এই বহরে আরো ৫০টি বাস যুক্ত করা হবে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করবে। সকাল ৬টা থেকে সকাল ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘পিক টাইম’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময় ৫ মিনিট পর পর যাত্রীছাউনিতে বাস এসে দাঁড়াবে। অন্য সময় আসবে প্রতি ১০ মিনিট পর পর। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবে না।
ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত পুরো পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮ কিলোমিটার। শুরুতে প্রতি কিলোমিটারে ২.১৫ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হবে। তবে বাস মালিক পক্ষ ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে তিন টাকা করার প্রস্তাব জানাবে বলে জানা গেছে।