English

26 C
Dhaka
বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

চার গ্রামের মানুষের ভরসা ১৪টি বাঁশের সাঁকো

- Advertisements -

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে দেখা দেওয়া ভাঙন সাড়ে তিন মাসেও সংস্কার হয়নি। খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশের এই বাঁধের আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙন-কবলিত আড়পাঙাশিয়া গ্রামে রাস্তার ওপর নির্মিত ১৪টি বাঁশের সাঁকোই চার গ্রামের ৯ হাজার মানুষের চলাচলের ভরসা। এ ছাড়া পিচ ঢালাইয়ের পূর্বমুহূর্তে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ  দুর্গাবাটির তিন কিলোমিটার রাস্তা মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন সুন্দরবন উপকূলবর্তী দুর্যোগকবলিত বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, আড়পাঙাশিয়া, মাদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম  দুর্গাবাটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশে বেড়িবাঁধের ৩২০ ফুট ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আড়পাঙাশিয়া, মাদিয়া, দুর্গাবাটি ও বিল আইট গ্রাম। ভেসে যায় শতাধিক ছোট-বড় চিংড়ি ঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় চার কিলোমিটার ইটের সোলিং ও মাটির রাস্তা। এর মধ্যে বিলআইট গ্রামের পরিমল জোয়ার্দারের বাড়ির সামনে থেকে আড়পাঙাশিয়া মণষাতলা হয়ে মাদিয়া খোন্তাকাটা মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যবর্তী ১৪টি স্থান ভেঙে যায়।

পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে ওইসব জায়গায় বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় সাঁকো। দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৯ হাজার মানুষের চলাচল, সুপেয় পানি সংগ্রহ, গবাদি পশুর ঘাসপাতা সংগ্রহের জন্য এ বাঁশের সাঁকোই একমাত্র অবলম্বন। তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক সময় দোলনা ও নৌকা ব্যবহার করতে হয়। বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেক বৃদ্ধ ও শিক্ষার্থীরা পড়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ দুর্গাবাটিসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। পিচ ঢালাইয়ের আগেই গোপালের মোড় থেকে মন্দিরবাড়ি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। দীর্ঘদিন রাস্তা পানিতে ডুবে থাকার ফলে রাস্তায় ব্যবহৃত ইটের খোয়া উঠে গেছে। এতে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চলাচলই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। লোনা পানির কারণে ক্ষেতের আমন ধান শুকিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির পুকুর।

আড়পাঙাশিয়া প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র জোয়ার্দার জানান, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। চিংড়ি ঘের, সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। সিত্রাংয়ে ক্ষতি না হলেও সিডর, আইলা ও ফণির মতো ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে এখানকার জনপদ। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাসে গত ১৪ জুলাই পশ্চিম দুর্গাবাটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আড়পাঙাশিয়া মণষাতলা হয়ে মাদিয়া খোন্তাকাটা মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যবর্তী ১৪টি স্থানে স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো বানানো হয়। এই সাঁকোই আড়পাঙাশিয়া প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুর্গাবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আড়পাঙাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন।

একইভাবে শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা বলেন তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামরঞ্জন বিশ্বাস। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বিজয় প্রসাদ বিশ্বাস, পরিমল জোয়ার্দার, মনোতোষ মণ্ডলসহ কয়েকজন জানান, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার পর ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলোতে মাটি দেওয়া হয়েছিল। কোথাও কোথাও ইটের সোলিং করা হয়েছিল। প্রতিবছর ঝড়-বৃষ্টিতে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার ওইসব রাস্তা এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখার কেউ নেই বললেই চলে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের
ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করে, আর পকেট গরম হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের।

বীরসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সৃজন বিশ্বাস ও মানবেন্দ্র বিশ্বাস জানায়, আড়পাঙাশিয়া খালের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো পার হয়ে তাদের বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে হয়। দুর্গাবাটিতে ভাঙনের পর তাদের গ্রামের রাস্তার ওপর কয়েকটি বাঁশের সাঁকো নতুন করে পার হতে হচ্ছে সাড়ে তিন মাস ধরে।

আড়পাঙাশিয়া গ্রামের সুলেখা বিশ্বাস ও তুলসী রানী মণ্ডল বলেন, ভাঙনে ক্ষেতে জোয়ার-ভাটার খেলায় লোনা পানিতে শুকিয়ে গেছে তাদের আমন ধান। পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। এর পরও দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে মিষ্টি পানির পুকুর থেকে লাইন দিয়ে দুই বেলা পানি আনতে গিয়েই দিনের অর্ধেক শেষ। রাস্তার কারণে বাড়ির পুরুষরা সকালে বাজারে গেলে ফিরে আসতে বিকাল হয়। রাস্তায় বাঁশের সাঁকোর কারণে অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বাদের দোলনায় করে বা আড়পাঙাশিয়া খাল দিয়ে নৌকায় বা ডোঙায় করে শ্যামনগর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিকাশ মণ্ডল জানান, দুর্গাবাটিতে ভাঙনের ফলে পিচ ঢালাইয়ের আগেই গোপালের মোড় থেকে মন্দিরবাড়ি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। দীর্ঘদিন রাস্তা পানিতে ডুবে থাকার ফলে রাস্তায় ব্যবহৃত ইটের খোয়া উঠে গেছে। রাস্তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ তার চোখে পড়েনি।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুকুন্দ পাইক জানান, রাস্তার ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকের নিচে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২২ টন চালের কাজ সাড়ে পাঁচ টন চাল দিয়ে করতে বলা হয়েছে। আগামী মাসে কিভাবে মাটি সংগ্রহ করে রাস্তা সংস্কার করা হবে সেটা তার বোধগম্য নয়।

শ্যামনগরের ৯ নম্বর বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর আড়পাঙাশিয়াসহ কয়েকটি রাস্তায় সাত টন চাল বরাদ্দ দিয়ে মাটি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছিলেন। দুর্গাবাটিতে সম্প্রতি ভাঙনের পর রাস্তায় মাটি দিতে সাড়ে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার দুই পাশের ঘের শুকিয়ে গেলে মাটি সংগ্রহ করে ডিসেম্বর থেকে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন জানান, গত ১৪ জুলাই দুর্গাবাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের তিন-চারটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছিল। এতে অনেকগুলো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা সংস্কারে আপাতত কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে চলতি নভেম্বর মাস থেকে মেরামত কাজ শুরু হবে। মাটি ভরাট করে প্রাথমিক কাজ শেষ হলে ইট সোলিংয়ের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন