ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের মাসখানেকের মধ্যে তাতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া এজিং ভেঙে হুমকির মুখে পড়েছে সদ্য কাজ শেষ হওয়া সড়কটি। রাস্তাটির কাজের দায়িত্বে ছিল তাসা কনস্ট্রাকশন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ এলজিআরডি (স্থানীয় সরকার বিভাগ) প্রকল্পের আওতায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পুনঃসংস্কার কাজের বাজেট হয়। উপজেলার সাতৈর বাজার থেকে ডোবরা পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাস্তাটির কাজ শুরু হয়। আর কাজ শেষ হয় এপ্রিলের শেষের দিকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি নির্মাণের এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়া, কার্পেটিং উঠে যাওয়া ও এজিং ভেঙে পুকুরে চলে গেছে। নিম্ন মানের ইট, খোয়া, পাথর, বালু ব্যবহারের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতৈর দিঘীরপাড় এলাকায় রাস্তার এজিং ভেঙে পাশের দিঘিতে চলে গেছে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এছাড়া নানা জায়গায় সড়কটি দেবে উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
আরও দেখা যায়, ওই এলাকার ডোবরায় জনতা জুট মিল অবস্থিত। মিলের পশ্চিম পাশ এলাকার শ্রমিকদের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। প্রতিদিন সাধারণ মানুষ ও শতশত শ্রমিক এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করেন।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিদিন আমরা এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি এবং মৌসুমের ফসল মালগাড়িতে বহন করে বাড়িতে নিতে হয়। তবে এ রাস্তার কাজ যেভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করা হয়েছে তাতে কতদিন ভালো থাকবে তা দেখা আর ভাবার বিষয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সাতৈর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলিম শেখ বলেন, খুবই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভারী যান তো দূরে থাক, হালকা যানবাহন চললেও বেশিদিন এ সড়ক টিকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, সড়ক নির্মাণের কয়েকদিন পর বিভিন্ন স্থান গর্ত হয়ে দেবে গেছে। অনেক স্থান উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। সড়কের কাজ করার সময় ঠিকাদার নতুন ইট, বালু দেননি। রাস্তার পুরাতন ইট তুলে তার ওপরে পিচ ঢেলে রোলার টেনেছেন। যার ফলে রাস্তা নির্মাণ হতে না হতেই পিচ উঠে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ যেন সরকারি টাকা জেনেশুনে জলে ঢেলে দেওয়ার মতো অবস্থা।
তার অভিযোগ, অনেক স্থানের আগের এজিং উঠিয়ে রাস্তা ছোট করে পুনরায় এজিং বসানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এজিং থেকে চার ইঞ্চি ফাঁকা রেখে পিচ ঢালায় দেওয়া হয়েছে। আগের রাস্তায় দুটি মালগাড়ি অনায়াসে ক্রসিং করতে পারতো, রাস্তা ছোট করাতে তা এখন কষ্টকর।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কের ধারণক্ষমতা ১০ থেকে ১২ টন। সেখানে ভারী যান ও ১০ চাকার গাড়ি চলাচল করে। যার কারণ সড়কের এক জায়গায় একটু সমস্যা হয়েছে। পুরো সড়ক ঠিক আছে।
তিনি আরও বলেন, ভালোমানের সামগ্রী দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করা হয়েছে। তারপরও নষ্ট জায়গা ঠিক করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) রাশেদ ইকবাল বলেন, কাজ নিয়মানুযায়ী করা হয়েছে। আসলে ওই স্থানের মাটি খারাপ। রাস্তার পাশে অনেক পুকুর-দিঘী রয়েছে। যার ফলে সড়কের সমস্যা হতে পারে। আর সড়কের ধারণক্ষমতা ১০ টন। কিন্তু রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচল করার কারণে সড়ক ভেঙে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জামানতের ৫ শতাংশ টাকা জমা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি কোনো অন্যায়-অনিয়ম পছন্দ করি না। তাছাড়া এ বিষয়ে কেউ মৌখিক বা লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। তারপরও যদি নিম্নমানের কাজ করা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো হবে এবং এ কাজের সঠিক তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।