কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতর সড়ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। টানেলের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে স্থাপন করা প্রথম টিউবের ভেতর এই সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ জানান, প্রথম টিউবের ভেতরে পতেঙ্গা অংশে আরসিসি ঢালাই দিয়ে ইন্টারনাল স্ট্রাকচারের কাজ চলছে। এর উপর দিয়েই চলবে গাড়ি। তিনি বলেন, প্রথম টিউবের ভেতর ইন্টারনাল স্ট্রাকচার তৈরির পাশাপাশি আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে টিবিএম মেশিন দিয়ে দ্বিতীয় টিউব বোরিং এর কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২২৪ মিটার বোরিং কাজ শেষ হয়েছে দ্বিতীয় টিউবের।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম এই মেগা প্রকল্পের ৬৩ দশমিক ৫০ ভাগ কাজ শেষ করেছি আমরা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে আমাদের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, শ্রমিকরা রাতদিন কাজ করছেন।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পে। দুই টিউবের এই টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সিটি আউটার রিং রোড দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্তে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের চাতুরী চৌমুহনী পয়েন্টে ওঠা যাবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। এতে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।