English

27 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

এমন যাত্রী সংকট পরিস্থিতি গত ৪০ বছরেও হয়নি: সিট খালি রেখেই যাচ্ছে বাস!

- Advertisements -

ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনগুলোতে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কাঙ্ক্ষিত টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, এরপরও মিলছে না টিকিট। ঠিক এর বিপরীত চিত্র রাজধানীর গাবতলী বাস কাউন্টারগুলোতে। পর্যাপ্ত যাত্রী আসছে না। সে কারণে বিলম্বে ছাড়তে হচ্ছে প্রতিটি বাস। যাত্রীর আশায় দেরি করলেও আশায় গুড়েবালি। বাধ্য হয়ে সিট খালি রেখেই বাস ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ঈদের আগে এমন যাত্রী সংকট পরিস্থিতি গত ৪০ বছরেও হয়নি বলে দাবি করেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ভোর থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে গাবতলীতে আসতে শুরু করেন অনেকে। তাদের কেউ একা, আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে আসছেন। যাত্রীর ভিড় না থাকায় টিকিট পেতে বেগ পেতে হচ্ছে না। তবে অন্য সময়ের চেয়ে বাড়তি টাকায় দূরপাল্লার বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এছাড়া বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়া হচ্ছে না বলে জানান তারা।

দক্ষিণবঙ্গগামী দ্রুতি পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মজনু বলেন, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, এরপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সিট খালি রেখে বাস ছাড়তে হচ্ছে। দেরি করে বাস ছেড়েও ৫-১০টি সিট খালি থাকছে।

তবে বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে শনিবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত তাদের সব বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যশোর যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিলিয়া। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় হল থেকে বের হয়ে গাবতলীতে আসেন। অন্য সময়ের চেয়ে ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট নিয়েছেন।

এই শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয়েছে, সে কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। বেশি ভাড়ায় টিকিট কাটলেও নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়ছে না। সকাল সাড়ে ৯টায় বাস ছাড়ার কথা, ১১টা বেজে গেলো। কখন ছাড়বে তা কেউ বলতে পারছে না। জিনিসপত্র নিয়ে কাউন্টারের পাশেই অপেক্ষা করছেন তিনি।

অফিস ছুটি হয়নি মিরপুরে বসবাসকারী শহিদুল ইসলামের। স্ত্রীকে বাড়ি পাঠাতে গাবতলীতে এসেছেন। সাধারণ সময়ে কুষ্টিয়ার বাসভাড়া সাড়ে ৫০০ টাকা হলেও ২০০ টাকা বেশি দিয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে হয়েছে তাকে।

কথা হলে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ছুটি হয়নি বলে স্ত্রীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। আগামী শনিবার আমি বাড়ি যাবো। নিয়মিত শ্যামলী পরিবহনে যাতায়াত করলেও ঈদের কারণে বাড়তি ভাড়ায় টিকিট কিনতে হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১১টায়ও বাস ছাড়েনি। কখন ছাড়বে তাও কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে শ্যামলী কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সূর্য মিয়া বলেন, যাত্রীসংকট, সে কারণে নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। দেরি করে ছাড়লেও সিট খালি রেখে যেতে হচ্ছে। দু/একজন যাত্রী যদি পাওয়া যায়, সে আশায় দেরি করে বাস ছাড়া হচ্ছে।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও মালিকরা বেশি ছাড় দিয়ে থাকেন। ঈদের সময় ছাড় কম দেওয়া হচ্ছে বলেই অতিরিক্ত ভাড়া মনে হচ্ছে। আসলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার জাকির মল্লিক বলেন, ঈদের আগে এসময়ে প্রতিদিন ২৫-৩০ বাস ছাড়লেও এখন ৫-১০টি সিট খালি রেখেই ২০-২৫টি বাস ছাড়তে হচ্ছে। সকাল থেকে ৫টি বাস ছাড়লেও প্রতিটিতেই সিট খালি রেখে ছাড়তে হয়েছে। গত ৪০ বছরেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।

তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও ৪০ সিটের গাড়িতে ২১ জন যাত্রী পাওয়া গেছে। ৩০ মিনিট দেরি করলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রী পাওয়া না গেলে এই কজন নিয়েই বাস ছাড়তে হবে। তবে তাদের ২৮-২৯ এপ্রিলের সব বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

এমন যাত্রীসংকট থাকলে বাস মালিককে কী জবাব দেবেন- এমন প্রশ্ন তুলে ঈদের আগে বেতন বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিবার নিয়ে ঈদ করতে মাদারীপুর যাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম। অফিস ছুটি হওয়ায় সকাল-সকাল গাবতলীতে এসে বাড়তি ভাড়ায় টিকিট সংগ্রহ করেছেন। টিকিট পেতে ঝামেলায় পড়তে না হলেও নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরও বাস ছাড়েনি। সবাইকে নিয়ে কাউন্টারেই অপেক্ষা করছেন।

তিনি বলেন, ঈদের আগে সবাই বাড়তি ভাড়া নিয়ে থাকে। কাউন্টারগুলোতে এক ধরনের সিন্ডিকেট করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। ভাড়া বেশি নিলো, আবার যাত্রীসংকটের অজুহাতে দেরি করে বাস ছাড়া হচ্ছে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন