পাশেই ওভার ব্রিজ। হয়তোবা রাস্তা পার হতে ৫ মিনিট সময় বেশি লাগবে। তারপরও অতি তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হতেই হবে। নেই জীবনের মায়া। রাস্তা পারি দিতে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। সে দিকে তাকানোর সময় নেই। দু’পাশ থেকে উচ্চগতিতে আসছে গাড়ি।দেখার পরও রোড ডিভাইডারের উপর দিয়ে লাফিয়ে রাস্তা পারাপারের চেষ্টা করছে প্রথমে এক স্কুল শিক্ষার্থী। এরপর আরেক পথচারী।
দৃশ্যটি চোখে পড়ে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ঢাকার ধামরাই পৌরসভার থানা বাসস্ট্যান্ডে ধামরাই প্রেসক্লাবের সামনে। রোড ডিভাইডারের উপর লাফিয়ে উঠছে ওই পথচারী। রাস্তার দক্ষিণ পাশ থেকে রোড ডিভাইডার পার হয়ে উত্তর পাশে যেতে তাকে একাধিক বার চলন্ত গাড়ির জন্য ডিভাইডারের উপর অপেক্ষা করতে হয়েছে। রোড ডিভাইডার পার হতে যতটুকু সময় লেগেছে ওই সময়ের মধ্যে কয়েকবার ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া যায়।
পরে জানতে পারি রাস্তা পার হওয়া শিক্ষার্থীর নাম সুজন হোসেন রানা। সে পৌরসভার একটি স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের নাম জিজ্ঞেস করলে উত্তর না দিয়ে সে দ্রুত চলে যায়।
একটু পরেই আরেক পথচারী রাস্তার দক্ষিণ পাশ থেকে রোড ডিভাইডারের উপর লাফিয়ে উঠছে আবার গাড়ি আসতে দেখে অপেক্ষা করছে। ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তার উত্তর পাশে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় কেন তিনি এতো ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারি দিলেন। তিনি একজন সচেতন ব্যক্তি। তাকে নাম জিজ্ঞেস করায় কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন।
এমন দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখা যায়। রাস্তার উপর দিয়ে ওভার ব্রিজ দেওয়ার পরও অনেকে রোড ডিভাইডারের উপর দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। বিশেষ করে দৃশ্যটি বেশি চোখে পড়ে দুপুরের দিকে। থানা বাসস্ট্যান্ডের পাশে ফ্রেম হাউজ নামে একটি জুতা কারখানার অনেক শ্রমিককে রাস্তা পারি দিতে দেখা রোড ডিভাইডারের উপর দিয়ে। দুপুরে খাবারের বিরতির সময় অনেক শ্রমিক ওভার ব্রিজে না উঠে রোড ডিভাইডার অতিক্রম করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
রোড ডিভাইডার অতিক্রম করার ফলে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। কয়েকদিন আগে ‘দি একমি ল্যাবরেটরিজ’ কারখানার সামনে কাজল নামে এক পথচারী অতি দ্রুত রোড ডিভাইডারের উপর দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক হতে আসা একটি গাড়ি তার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে তার শরীরের একটি অংশ আলাদা হয়ে যায়। ঘটনা স্থলেই তিনি মারা যান।
আবার, উল্টোপথে গাড়ি চলার কারণেও দূর্ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন পূর্বে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী উল্টো পথে গাড়ি চালানোর অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেন। কিছু সময়ের জন্য ঠিক মতো গাড়ি চললেও আবার সেই পূর্বের একই অবস্থা। সময় বাঁচানোর জন্য রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি এমনকি বড় যানবাহনও উল্টো পথে চলে থাকে। এতে একদিকে যানযট লেগে যায় অপরদিকে জীবনের ঝুঁকি থাকে।
এরপর কয়েক দফায় বিআরটি কর্তৃপক্ষ দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য যারা উল্টো পথে গাড়ি চালায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও থেমে থাকেনি উল্টো পথে গাড়ি চালানো। চলতি মাসের গত রবিবার অভিযান চালিয়ে ২৩ জনকে মামলা দিয়ে ১৯ হাজার ৫ শত টাকা জরিমানা করেন। কিছু সময়ের জন্য রাস্তায় গাড়ি চলাচল আইন মেনে চললেও আবার নিজেদের মতো করে গাড়ি চালায় চালকরা।
দূরপাল্লার গাড়ি ষ্টপিচে গাড়ি না থামিয়ে রাস্তার মাঝ লেনে যাত্রী নামিয়ে দেন। যাত্রী উঠানামা করার কারণে দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। ঝুঁকি থাকে জীবনের। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর সদস্যরা সঠিকভাবে ওভার ব্রিজ ব্যবহার করার জন্য ব্রিজের দু’পাশে সচেতনতা মুলক সাইন ব্যবহার করেন। তারপরও পথচারীদের বোধ হয় না। একই অবস্থায় রয়েছে তারা।
স্কুল শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, নিজে সচেতন না হলে কখনো অন্যের মাধ্যমে সচেতন করা সম্ভব নয়। একজন পথচারী নিজে ঝুঁকি সম্পর্কে জেনেও সে রোড ডিভাইডার অতিক্রম করে রাস্তা পারাপার হচ্ছে এটা দুঃখজনক। যদিও প্রতিটি ষ্ট্যান্ডেই ওভার ব্রিজ রয়েছে। একটু সময় বেশি লাগলেও জীবন নিরাপদ। শুধু মহাসড়কেই নয় আঞ্চলিক সড়কেও এমন দৃশ্য দেখা যায়। আইন করে এদের থামানো যাবে না। সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ধামরাই প্রেসক্লাবের পাশে চা বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, প্রতিদিন অনেক লোক ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রোড ডিভাইডার অতিক্রম করে রাস্তা পারাপার হয়ে থাকে। অনেককে বললেও শুনে না। নিজের চোখে কত দূর্ঘটনা দেখলাম সচেতন না থাকায় জীবনই শেষ।
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই শাখার সভাপতি এম. নাহিদ মিয়া বলেন, ঢাকা আরিচা মহাসড়কে ধামরাই অংশে গেল বছরের দুর্ঘটনার তথ্য অনুযায়ী এবার দ্বিগুণ বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ সড়কের অব্যবস্থাপনা, সড়কপথে চলাচলের উদাসীনতা, আইন না মানার প্রবণতা বৃদ্ধি ও সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনার অন্যতম কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা স্বেচ্ছায় বিভিন্ন সময়ে মহাসড়ক আঞ্চলিক সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক কার্যক্রমসহ জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মহাসড়কে উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় অনেক পথচারী দ্রুত পারাপারের জন্য রোড ডিভাইডার টপকে পার হতে গিয়ে চলন্ত গাড়ির চাপায় পৃষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে রয়েছে কিছু গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের রয়েছে সচেতনতার অভাব, দেখা যায় লান্স বিরতি অথবা ছুটির পরে দ্রুত বাসায় ফেরার একটি আকাঙ্ক্ষা। এতে অধিকাংশই জীবনের ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে সড়কে ফুটওভার ব্রীজ থাকা সত্বেও আইন না মেনে রাস্তা পার হচ্ছে। যার ধরুন ঘটছে দূর্ঘটনা।