ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমরা যত আলোচনা করি বা কথা বলি সমাধানে সেভাবে কাজ করি না। সড়কে শৃঙ্খলা আনায়নে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়ক, ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ ইত্যাদি কাজ সিটি করপোরেশন করে দিতে পারবে কিন্তু এনফোর্সমেন্ট তো নগর কর্তৃপক্ষের কাজ না।’
‘এগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই করতে হবে। দেখা যায়, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের ইটিং, সিটিং, গসিপিং (পরচর্চা) হচ্ছে কিন্তু ফলাফল জিরো। ফলাফল পেতে আমাদের আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে।’
আজ রবিবার ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রান্স ফর রোড ট্রাফিক ভিকটিমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংলাপের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর সহায়তায় প্রথমবারের মত নানা কর্মসূচি মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
মেয়র বলেন, রোড ক্র্যাশ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যা আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে। ঢাকায় ছোট গাড়ির আধিক্য যানজটের অন্যতম কারণ। আবার যানজট হতে মুক্ত হলে বেপরোয়া গতি লক্ষ্য করা যায়। যান্ত্রিক যানগুলো জেব্রা ক্রসিং ও সিগন্যালে সঠিকভাবে থামাকে পথচারীদের সড়ক পারাপারে ঝুঁকি কমে আসবে। এছাড়া, ঢাকার অনেক সড়ক পারাপারের জন্য ফুটওভারব্রিজ রয়েছে সেগুলো ব্যবহারেও পথচারীদের ঝুঁকি কমে আসবে। জেব্রাক্রসিংকে ছয় ইঞ্চির মতো উঁচু করে দেওয়া, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ নানা উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমরা নানা উদ্যোগ নেই কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ‘পোতায়ে’ যাই। বক্তব্য একরকম দেয় কিন্তু কাজ কেউ করে না। আমরা মুখে মুখেই ডিজিটাল, স্মার্ট কিন্তু আসলে কতটুকু প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছি তা ভেবে দেখতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিতে যে সময় ব্যয় হয়, সেই সময়ে মহাখালী পৌঁছে যাওয়া যায় উত্তরা থেকে। আমরা এমনভাবে সবকিছুর জন্য কৃতিত্ব দাবি করি তাতে মনে হয় লজ্জাটুকুও আর অবশিষ্ট নাই। লজ্জা থাকলে কথায় বড় না হয়ে কাজ করে দেখাতাম, দায়িত্ব পালন করতাম।
অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো সাংবাদিক নিখিল ভদ্র তার দুর্ঘটনা ও পরবর্তী সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারানো অ্যাডভোকেট ইতি রানী সাহা দুর্ঘটনা পরবর্তী সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
নিখিল ভদ্র বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুর্ঘটনার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার লোক যেমন ছিল না তেমনি চিকিৎসকদের ভুলে তার পা যতটুকু কাটা পড়েছে তা হয়তো পড়ত না। তার চিকিৎসা ব্যয়ের ৭০ লাখ টাকা সরকার, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিক সংগঠন থেকে দিলেও দুর্ঘটনার পর আড়াই মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে যে অবর্ণনীয় কষ্ট তার স্ত্রীকে ভোগ করতে হয়েছে তা কেউ অনুধাবন করবে না। দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পরেও এদেশে প্রতিনিয়ত হুইলচেয়ার উপযোগী ভবন না থাকায় চলাচলে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এসব বিষয়ে দৃষ্টিপাতের আহ্বান জানান তিনি।
ইতি রাণী সাহা বলেন, তার স্বামীর মৃত্যুর পর সবাই তার ও সন্তানদের পাশে দাঁড়ালেও লড়াইটা তাকেই করতে হচ্ছে। যে সড়কে তার স্বামী মারা যান, জীবীকার খাতিরে তাকে সেই সড়কেই চলাচল করতে হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে অনভিজ্ঞ চালকদের লাইসেন্স দেওয়া থেকে বিরত থাকা, প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো, যাত্রী ও পথচারীদের সতর্ক চলাচল ও আইন মানার আহ্বান জানান তিনি।
ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এতে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মেহেদী হাসান।