রজব আলীর বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পিয়ারখালী গ্রামে। ঢাকার একটি ওয়ার্কশপে হেলপার হিসেবে কাজ করেন।
ঈদের ছুটিতে শুক্রবার (৮ জুলাই) রাত আড়াইটায় রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে রওনা দেন। অন্য সময় ঈশ্বরদী যেতে তার সর্বোচ্চ ৬/৭ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায় বাইপাইল, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর ও টাঙ্গাইলে যানজটে পড়তে হয়েছে তাকে। বিকেল তিনটায় ১৩ ঘণ্টায় তিনি কালিহাতী উপজেলার মিরহামজানি পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। প্রচণ্ড গরম ও গাড়ির হর্ণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রজব আলী বলেন, ১৬ বছর যাবত ঢাকায় যাতায়ত করি। কখনো এমন যানজটে পরিনি। ১৩ ঘণ্টায় অর্ধেকের সামান্য বেশি রাস্তা এসেছি। জানতে পারলাম সিরাজগঞ্জেও যানজট আছে। তাই বাকি পথ পাড়ি দিতে কত সময় লাগবে, বুঝতে পারছি না।
শুধু রজব আলী নয়, তার মতো হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাড়ি বিকল, সড়ক দুর্ঘটনা ও সিরাজগঞ্জ অংশ থেকে গাড়ি টানতে না পারায় টাঙ্গাইলের অংশে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার ভোর রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তের পিলারের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট টোল আদায় বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট ছিল। বেলা বাড়ার পর তা কমতে থাকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৪ টা) বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সদর উপজেলার রাবনা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের রাবনা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপার পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে যেতেই সাড়ে ৪ ঘণ্টা লেগেছে। যানজটে আটকে থাকা মানুষ প্রচণ্ড গরমে কেউ ট্রাকের নিচে, কেউবা বাসের পাশে বসে একটু প্রশান্তি খুঁজছেন। কাউকে কাউকে ১৫ টাকার পানির বোতল ২৫ টাকা দিয়েও কিনতে দেখা গেছে। এছাড়াও কালিহাতী উপজেলার মিরহামজানী গ্রামের যুবকদের টাকা-পয়সা ছাড়াই ঘরমুখো যাত্রীদের পানি সরবরাহ করতে দেখা গেছে।
জোকারচর এলাকায় কথা হয় চাপাই সদরের তুহিন মিয়া সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত ১২টায় ঢাকার কচুক্ষেত থেকে বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত জোকারচর এলাকায় এসেছি। চোখের সামনে ও পেছনে হাজার হাজার গাড়ি। ক্ষুধায় টিউবওয়েলের খোলা পানি ৫ টাকা গ্লাস কিনে খেয়েছি। সবই মিলিয়ে নাকাল হয়ে পড়েছি।
রাজশাহীর বিপ্লব বলেন, আগে মিরপুর থেকে রাজশাহী যেতে সর্বোচ্চ ৭ ঘণ্টা লাগতো। কিন্তু যাজটের কারণে ১৫ ঘণ্টায়ও টাঙ্গাইল পার হতে পারলাম না। গরম ও ক্ষুধায় খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি। ভেবেছিলাম অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু তা আর হলো না।
পাবনার সখিনা বেগম বলেন, ১০ ঘণ্টা যাবত যানজটে আটকা থাকায় আমাদের নারীদের বাথরুম করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও আমার দেড় বছর নাতির খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ থাকায় শরীর মনে হচ্ছে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক সময়ে ১২/১৩ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েক গুণ বেশি যানবাহন সেতু পারাপার হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত সেতুর ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গগামী ২৯ হাজার ৭২টি যানবাহন পারাপার হয়। আর এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। অপরদিকে ঢাকাগামী ১২ হাজার ৮৭৮টি যানবাহন যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৫০ টাকা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, ‘যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। সড়কে গাড়ির ব্যাপক চাপ রয়েছে। সড়ক স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য কাজ করছে।