রাজবাড়ী সদর উপজেলার কামালপুর হাট ভায়া ১ নম্বর বেড়াডাঙ্গা সড়কের সংস্কার কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সড়কটি কার্পেটিং করার পরদিনই স্থানীয়দের হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে নিতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, যথাযথ নিয়ম না মেনে সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে এখন হাতের টানে কার্পেটিং উঠে আসছে। কাজ ভালো হলে তো হাতের টানে কার্পেটিং উঠে আসা সম্ভব না।
তবে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি, নিয়ম মেনেই কাজ হয়েছে। একটি দুষ্টচক্র শক্ত কিছু দিয়ে কার্পেটিং আলগা করে এখন হাত দিয়ে উঠাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজবাড়ী সদর উপজেলা থেকে কামালপুর হাট ভায়া ১ নম্বর বেড়াডাঙ্গা সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২ হাজার ৩৬০ মিটার দীর্ঘ এ সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয় ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিলে শুরু হওয়া কাজটি ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে করা হয়েছে চলতি বছরের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
এদিকে, সড়কের অন্য কাজ শেষে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বেড়াডাঙ্গার শেষ থেকে সড়কের কিছু অংশ কার্পেটিং করা হয়। পরদিন সড়কের বিভিন্নস্থানে নরম ও মোটরসাইকেলের চাকার সঙ্গে কার্পেটিং উঠে আসার ঘটনা ঘটলে ওইদিন দুপুরে স্থানীয়রা সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টেনে কার্পেটিং তুলে ফেলেন।
এ সময় স্থানীয়রাসহ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী রিকশা-ভ্যানচালকরা সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ করেন। এছাড়া কার্পেটিংয়ের আগে রাস্তা পরিষ্কার না করে ধুলাবালির ওপর দিয়ে তেল দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
রিকশাচালক মোমিন মোল্লা বলেন, যে টাকা খরচ করে রাস্তা করা হচ্ছে, সেই টাকা জনগণের। সঠিকভাবে কাজ করলে দীর্ঘদিন থাকে। ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারের কারণে এখন কাজ ভালো হয় না। এবং এই কাজটাও ভালো হয়নি। আরও ভালো হওয়া উচিত ছিলে। স্থানীয়রা যে কাজ করেছে, তা ভালোই করেছে। আমার এলাকা হলে আমিও তাই করতাম।
স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাক, বাবলু, রিংকু, আলাউদ্দিন শেখ, নিলয়সহ অনেকের অভিযোগ, ১৪ মার্চ কার্পেটিং করার পর ১৫ মার্চ দুপুরে যানবাহন যাওয়ার সময় চাকার সঙ্গে তা উঠে আসে। কার্পেটিংয়ের আগে ধুলাবালি পরিষ্কারও করা হয়নি। প্রায় এক কিলোমিটার কার্পেটিং হয়েছে, এর একাধিক স্থানে এরকম উঠে এসেছে।
তারা আরও বলেন, কাজ ভালো হলে এভাবে টেনে তোলা সম্ভব হতো না। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় এ অবস্থা। এ রাস্তা টেকশই হবে না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খন্দকার আব্দুস সোবহান বলেন, গুণগত মান ঠিক রেখেই কাজ করেছি। দুষ্কৃতিকারীদের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা রাতের আঁধারে কোনো বস্তু দিয়ে রাস্তা খুড়ে তারপর হাত দিয়ে তুলেছে। যাতে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়। এছাড়া আমার কাজের স্যাম্পল নিয়ে ল্যাবে টেস্ট করা হয়েছে।
এলজিইডি রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, কার্পেটিং করার পর নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই একটি চক্র কোনো বস্তু দিয়ে কার্পেটিং আলগা করে তারপর হাত দিয়ে তুলছে। কাজের গুণগত মান সব ঠিকঠাক আছে। ল্যাবে টেস্ট করেও গুণগত মান ঠিক পাওয়া গেছে।