আর মাত্র একটি রাত, কয়েক ঘণ্টা মাত্র। তারপরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।
শনিবার (২৫ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে নতুন ইসিহাস সৃষ্টি করবেন।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে ঢাকাসহ দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। রাজধানীও সেজেছে নতুন আমেজে। বিশেষ করে সেতুর দুই প্রান্ত সেজেছে নতুন সাজে।
উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে শিবচরে তৈরি হয়েছে জনসভার মঞ্চ। মঞ্চের সামনে পানিতে ভাসছে নৌকা। তার পাশে পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে এ জনসভায় দশ লাখ মানুষের সমাগম হবে। নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে রওনা দেবেন শেখ হাসিনা। তারপর মাওয়া প্রান্তে সকাল ১০টায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। পরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এরপর টোল দিয়ে সেতু পার হবেন তিনি।
তথ্যমতে, বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেল পথ। উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুতে দৈনিক ১২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
বিশ্বের খড়স্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়।
পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০ তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি।
পদ্মা সেতুর পাথর ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে আমদানি করা, যার একেকটির ওজন একটন। সেতুকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে ফিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং লাগানো হয়েছে; যা রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে। বিশ্বে কোন সেতুতে এত শক্তিশালী বেয়ারিং লাগানো হয়নি।
সেতুর পাইলিং ও খুঁটির অংশে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা অতিমিহি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। নদী শাসনে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়, এ কাজে বিশ্বে এতো বড় দরপত্র আর হয়নি।
পদ্মা সেতুতে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। সাধারণ আলোক সুবিধার পাশাপাশি সেতুতে রয়েছে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনে রয়েছে আর্কিটেকচার লাইটিং।
স্বাভাবিক সময়ে নদীর পানি থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। এর নিচ দিয়ে পাঁচ তলা উচ্চাতার নৌযান চলাচল করতে পারবে।
৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচে নির্মিত পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেতুটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের বুকে এক রোল মডেল।
ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে।