করোনা সংক্রমণ এদিকে সরকার ঘোষিত দূরপাল্লার বাস চলাচলে বিধি নিষেধ। তাই প্রিয়জনদের সাথে ঈদ কাটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওরা ফিরছে গ্রামের বাড়ী। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ট্রাক- পিকআপ অটোরিকশা করে যাতায়াত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাকে থেকে অনেকেরই শরীর বেঁকে যাওয়ার দশা, তরুন বয়সী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরো প্রকট, তবুও পিছু হটছে না ঘরমুখো মানুষ।
বাড়িতে অপেক্ষার প্রহর গুণছে স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বিকেল বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মহাস্থান এলাকায় উত্তরবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির এমন চিত্রই দেখা যায়।
অনেক যাত্রীই আবার ট্রাকের ছাদে রশি দিয়ে নিজেকে বেঁধে নিয়েছেন। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে অনেকেই ওই অবস্থাতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। বাড়ী গাইবান্ধা এলাকায় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ১দিন আগে ঢাকার সাভার থেকে ট্রাকে করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
তারা আরও জানান, অভাবের সংসারের হাল ধরতে জীবিকার তাগিদেই তাদের ঢাকায় কাজ করতে হয়। গ্রামে মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই ছাড়া আর কিছুই নেই। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। আর এর জন্য পদে পদে পোহাতে হয় ভোগান্তি। কিন্তু বিকল্প কিছু করার উপায় নেই তাদের। গার্মেন্টসের চাকরি থেকে যে বেতন পান তাতেই কোনো রকম সংসার চলে।
প্রতি বছর দুই ঈদে ছুটি জোটে তাদের কপালে। সেই ঈদ ঘিরে বাড়ী ফিরতে নানা ধরনের ভোগান্তির পাশাপাশি খরচ করতে হয় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া। গত ঈদে ভাড়া বাঁচাতে অনেকে ট্রাকে করে রওনা দিয়ে ছিলেন দেশের বাড়ী। এবার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভাড়া বেশি গুণেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রখর রোদ বৃষ্টি অপেক্ষা করে নিজ গন্তব্যে পৌছিতে হচ্ছে। ট্রাক যোগে। ভাড়া বেশি তারপরও সে যাত্রা নির্বিঘ্ন হয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যেক ঈদেই তাদের গ্রামের উদ্দেশ্যে এভাবেই ছুটতে হয়। তার মধ্যে আবার করোনা এসে পরিস্থিতি আরো এলোমেলো করে দিয়েছে। যাদের সাধ্য আছে তারা আবার হাইস- কার, মাইক্রবাস, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাড়ী ফিরছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, ঈদে বাড়ী ফিরতে গরীবদের জন্য সরকার কর্তৃক কোন ব্যবস্থাপনা করা হয়নি। আমরা গরীবরা সবসময়ই অবহেলার পাত্র।