English

19 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

ট্রাফিক পুলিশের মানসম্মত পুলিশ বক্স প্রয়োজন

- Advertisements -

সড়ক ও মহাসড়কে শৃঙ্খলিত যানবাহন চলাচল ও জনসাধারণের চলাচল নিরাপদ রাখতে ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদেরকে বলা হয় সামগ্রিক পুলিশের দর্পন। সর্বদা দৃশ্যমান ও সদাজাগ্রত ট্রাফিক পুলিশের কষ্টের কিন্তু শেষ নেই। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বেশিরভাগ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য কিছু পুলিশ বক্স স্থাপিত হলেও তা প্রয়োজনের তূলনায় অপ্রতুল। যে কয়েকটি পুলিশ বক্স রয়েছে তাও মানসম্মত নয়।

বেশিরভাগ বক্সে নেই কোনো ওয়াশরুমের ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত জায়গা ও আলো বাতাস। উপরন্তু, সড়ক বা মহাসড়কের সন্নিকটে হওয়ায় তা ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন থাকে। একে তো পুলিশ বক্সের স্বল্পতা তারপর আবার বেশিরভাগ বক্সে নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা, রেস্ট নেওয়ার যায়গা, থাকার জায়গা। আর টয়লেটের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এসব কারণে ট্রাফিক পুলিশের দুর্ভোগের সীমা অন্তহীন।দিন রাত ২৪ ঘন্টা রাস্তায় থেকে ধুলোবালি, হাইড্রোলিক হর্নের বিকট শব্দে, রোদ বৃষ্টিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কষ্ট করে।

অনেক ধরণের শারিরীক জটিলতা, রোগব্যাধিতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা অন্য যেকোনো সরকারী কর্মচারীদের তূলনায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।রাজধানীর অনেক ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নেই টয়লেট। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত দারুণ অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী ট্রাফিক পুলিশদের। দীর্ঘদিনেও এর সমাধান না পেয়ে হতাশ তারা। এমনকি টয়লেটে যেন কম যেতে হয় সেজন্য হাড়ভাঙা ডিউটিতেও পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে!

আইনগত পদক্ষেপ নিতে গেলে সাধারণ মানুষের বিরাগভাজন হতে হয়। বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী কাগজপত্রবিহীন ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারী যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে ট্রাফিক-পুলিশকে নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী অনেক ব্যক্তি বা যানবাহনের লোকজন বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তির রেফারেন্স বা নাম ব্যবহার করে পুলিশ সার্জেন্টদের কাছে মামলা থেকে রেহাই পেতে চান।

কিন্তু, তারা ট্রাফিক আইন মানতে চান না বা পূনরায় একই কাজ করেন। এরকম বহু অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার শিকার হতে হয় ট্রাফিক পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে।এধরণের নানাবিধ প্রতিকূলতার শিকার হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের প্রতিটি সদস্য। কিন্তু, নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের প্রয়োজনে ট্রাফিক পুলিশের জন্য মানসম্মত ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পুলিশ বক্স প্রয়োজন।

সরেজমিনে ট্রাফিক-ডেমরা জোনের অধীন ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, দনিয়া, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, মুন্সীখোলা ও পোস্তগোলা ইত্যাদি এলাকা পরিদর্শন করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ স্থানেই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দিনরাত ডিউটি করলেও তাদের বসার কোনো জায়গা নেই।পুলিশ সদস্যরা কাছে কোনো চায়ের দোকান, যাত্রী ছাউনি কিংবা রাস্তার ধারে কোনো দোকানে রেস্ট নেয়। দু’একটি যা ও বক্স আছে তাতে নেই পর্যাপ্ত জায়গা, টয়লেটের ব্যবস্থা কিংবা আলো-বাতাস। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ বক্সই লোহার তৈরি। নিম্নমান সম্পন্ন এসকল বক্স অধিক মাত্রায় তাপ ধারণ করে। ফলে এ সকল বক্সে থাকাও কষ্টকর।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমে এগিয়ে আসে ট্রাফিক পুলিশ। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়াসহ হাসপাতালে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তারা। অথচ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ঝড়–বৃষ্টির সময় আশ্রয় নেওয়ার মতো ট্রাফিকের কোনো জায়গা থাকে না। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শৌচাগার না থাকায় তাঁরা কিডনি রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। এসব দিক বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে উড়ালসড়কের নিচে অব্যবহৃত জায়গায় এ ধরনের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।

“নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা”চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এর সাথে আলাপকালে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে ট্রাফিক পুলিশ বক্স আছে,বাংলাদেশ ছাড়া? ট্রাফিক-ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের ডেমরা জোনের এসি ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, ট্রাফিক পুলিশবক্স মান সম্মত ও স্বাস্থকর পরিবেশে তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে থাকবে পর্যাপ্ত আলোবাতাস, ধুলা-ময়লা বা কালোধোয়ায় কাজ করার মাঝে যদি পরিস্কার পানির ব্যাবস্থা রাখা, শুধু তাই নয় পুলিশ বক্সগুলো হয়ে উঠতে পারে নাগরিক সেবাকেন্দ্র, যদি সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী রাখা যায় তবে তা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি যে কোন ছোট খাটো দুর্ঘটনায় পথচারী-যাত্রী সকল নাগরিকদের জন্য সহায়ক হবে তাই মহতী উদ্যোগের অংশ হিসেবে আধুনিক যুগোপযোগী পুলিশবক্স তৈরি করতে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক গন বিষয়টির প্রতি নজর দিলে তা নাগরিক সেবার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হবে।

“নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা”চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এর বক্তব্যের সূত্রধরে ডেমরা ট্রাফিক জোনের টিআই সাইফুল ইসলাম বলেন, উন্নত বিশ্বে পুলিশ যে পরিবেশে কাজ করে সে পরিবেশ আমাদের দেশের পুলিশ পায়না, তারা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে অটোমেটিক সুইচ টিপে ট্রাফিক সিগনাল নিয়ন্ত্রন করে আমাদের যেহেতু সড়কে দাড়িয়ে ট্রাফিক ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রন করতে হয় তাই নিম্নতম সুযোগ সুবিধা আমাদের ট্রাফিক বক্সে দেয়া দরকার।

এ বিষয়ে ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগে কর্মরত টিআই বিপ্লব ভৌমিক খবর প্রতিদিনের সাথে আলাপ কালে বলেন,একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা একটানা ডিউটি করতে হয়, এ সময় তার প্রাকৃতিক কাজ গুলো সারতে হলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়,ট্রাফিক বক্সগুলোতে টয়লেট না থাকায় সবচাইতে বেশী কষ্ট সইতে হচ্ছে নারী ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের, পুরুষরা যে কোন অফিস কিংবা প্রতিষ্টানে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজগুলো সারতে পারলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাছারা বর্তমান সরকারের আমলে সবকিছুই যখন ডিজিটাল হচ্ছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্রাফিক বিভাগ পিছিয়ে থাকতে পারে না।

কোভিড-১৯ মহামারী সহ যেকোনো দুর্যোগে বা সংকটে পুলিশ যদি মানবিক হতে পারে; পুলিশের দুর্যোগে আমরা কী পারি না একটু মানবিক হতে!

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন