উদ্বোধনের আগেই দেবে গেলো টাঙ্গাইল পৌর শহরের বেড়াডোমার লৌহজং নদীর ওপর ওমরপুর রোডের নির্মাণাধীন সেতু। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে ১০টায় সেতুটি দেবে যায়।
কাজের মান নিম্ন হওয়ায় সেতুটি দেবে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াডোমার লৌহজং নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেড অ্যান্ড দ্য নির্মিতি (জিভি)।
নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে ১২ নভেম্বর। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে ১১ মে। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় তিন কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটি মাঝখানে দেবে গেছে। সেখানে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। সেতুটি পরিদর্শন করেছেন পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি দেবে গেছে। সেতু দেবে যাওয়ায় ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও দুর্ভোগ বাড়লো বলে জানান তারা।
বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এর আগে এখানে যে বেইলি ব্রিজ ছিল তা পরপর দুইবার ভেঙে যায়। এতে কয়েক বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এবার স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে পরেছে ব্রিজ।’
স্থানীয় নুরু মিয়া বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা ব্রিজের কষ্টে আছি। ব্রিজ না থাকায় এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চান না। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে জমির দামও কমে গেছে।’
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনেন না। এই মুহূর্তে সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেলো।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জামিল ভাইসহ কয়েকজন। আমার নেতৃত্বে কোনো কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
জানতে চাইলে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, শুরু থেকে সেতু নির্মাণের কাজ ঠিক ছিল। নির্মাণের নিয়ম অনুসারেই কাজ চলছিল। প্রাকৃতিক কারণে নাকি নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটি হেলে পড়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান বলেন, গতবছর আমি অবসরে এসেছি। আমি কাজটির প্রকল্প পরিচালক ছিলাম। প্রকল্পের মেয়াদ অনুসারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর পর কাজটি শুরু করেছে। ঠিকাদারের কাজের অজ্ঞতা থাকাসহ অফিসিয়াল নিয়ম মানার প্রবণতা কম ছিল। এ কারণে আমি কাজটি বাতিল করতে চেয়েছিলাম।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সেতুটি হেলে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।