করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার চলামান লকডাউনের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। নতুন এ বিধি-নিষেধে কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তবে ঈদের আগে তিনটি কর্মদিবস থাকায় কিছুটা শিথিল করে ফের লকডাউন বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। পাশাপাশি সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালানোর বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এখনই চূড়ান্ত নয়।
আগামী ৫ মে লকডাউনের মেয়াদ শেষে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে ৬ (বৃহস্পতিবার), ৯ (রবিবার) ও ১১ মে (মঙ্গলবার)। এর মধ্যে ৭ ও ৮ মে হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। এরপর ১০ মে (সোমবার) হচ্ছে শবে কদরের ছুটি।
আগামী ১২ মে (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। রমজান মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয় তবে ঈদুল ফিতর হবে ১৩ মে। এ ক্ষেত্রে ১৩ ও ১৪ মে’ও (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ঈদের ছুটি থাকবে। তবে রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হলে ঈদের ছুটি আরো এক দিন বাড়বে, সে ক্ষেত্রে ১৫ মে’ও (শনিবার) ছুটি থাকবে।
সব মিলিয়ে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে তিনটি। সে ক্ষেত্রে লকডাউনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ের ওপর আমাদের চিন্তাভাবনা চলছে যে আমরা কী করব। তিনি বলেন, ৫ তারিখের পর বিধি-নিষেধের কী হবে সেটা এখনো চিন্তাভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। আমরা ৫ তারিখের আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ঈদের আগে যেহেতু কর্মদিবস কম, সেহেতু বিধি-নিষেধ চলমান রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
একই তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কিছু শর্ত শিথিল করে বিধি-নিষেধ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। চলমান বিধি-নিষেধ শেষ হওয়ার আগে একটি আন্তমন্ত্রণালয়সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিধি-নিষেধ দেওয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। পরে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধি-নিষেধ। এটি বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।
সর্বশেষ ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধি-নিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কয়েকটি শর্ত সংযুক্ত করে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপের সময় বাড়ানো হলো।
পাশাপাশি সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথাও চলমান বিধি-নিষেধের তালিকায় যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। সেগুলো হচ্ছে-
১. স্থল, নৌ ও বিমানযোগে যেকোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের (পণ্য পরিবহন ছাড়া) ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে শুধু ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি/অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনসংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষাসেবা বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
২. শপিংমলগুলো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট বাজার/সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩. আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম মানতে হবে।
৪. মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদসহ নন-কভিড-১৯ সনদধারী যাত্রীরা নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় আগমন ও কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি অবহিত করতে হবে।
৪. উল্লিখিত দেশ থেকে আগত শুধু নন-কডিড-১৯ সনদধারীরা সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় থাকবেন। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে সম্মতি প্রদান করলে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তবে সে ক্ষেত্রেও তাদের নিজ নিজ থানাকে অবহিত করতে হবে।
৬. অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ ব্যয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।