লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। এখনও পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৭ হাজার পরিবার। পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলের ভোগান্তি বেড়েছে বহু গুন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া, বারোঘরিয়া, গোবরধন, সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘরে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে রান্না, দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়া এসব নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা শফিয়ার রহমান (৩৫) বলেন, গত চারদিন ধরে নদীর পানি বেড়েছে। আর তিন দিন হলো বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে। রান্না করার জন্য চুলা জ্বালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাছাড়া খাবার পানিও সংগ্রহ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
একই এলাকার বাসিন্দা বদিউজ্জামান জানান, চরের জমিতে চাষ করা বাদাম এখনো ঘরে তোলা হয়নি। পানির স্থায়িত্ব আর একদিন থাকলে বাদাম গুলো পচে যাবে।
সদর উপজেলার পাকারমাথার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী, চর ও গ্রামে পানি থাকায় গরু ছাগল রাস্তায় রেখেছে। নিজেদের খাবারের কষ্ট তো আছে গরু ছাগলের জন্যও খাবার মেলানো যাচ্ছে না।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের আবলার বাজার এলাকার বাসিন্দা রুপন মিয়া বলেন, তিন দিন ধরে বাড়িতে পানি। স্ত্রী-সন্তানকে শশুর বাড়িতে রেখে এসেছি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন আদিতমারী উপজেলার বারোঘরিয়া, গোবরধনসহ তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি থাকা পরিবারের লোকজন।
শুক্রবার (২১ জুন) বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অবস্থিত তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১.৬৮ মিটার। যা বিপৎসীমার মাত্র ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে। তবে তিস্তার রেলসেতু পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.৩০ মিটার যা বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীতে পলি পড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আাসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পানি কমে গেলে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। পানি শুক্রবার সকাল (২১ জুন) থেকে কমতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামী ২৪ জুন থেকে আবারও তিস্তার পানি বাড়তে পারে।