গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের নার্স ও আয়াকে বকশিশ না দেওয়ায় নাক থেকে অক্সিজেন খুলে নেওয়ায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। শনিবার দুপুরের পর ঘটনাটি ঘটলেও বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
পরিবারের অভিযোগে জানা গেছে, গতকাল শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন তাঁর এক মাসের শিশুসন্তান আব্দুর রহমানের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের চিকিৎসক শিশুটিকে ভর্তি করাতে বলেন এবং দ্রুত অক্সিজেন দিতে বলেন। মোশারফ হোসেন শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। ভর্তি করার পর অক্সিজেন দেওয়া হলে শিশুটি সুস্থ হয়। এরপর শিশুটির বাবার কাছে নার্স রিমা আক্তার, রেহেনা বেগম, মনিকা বেগম এবং আয়ারা বকশিশ দাবি করেন। তখন শিশুটির বাবা মোশারফ হোসেন নার্স ও আয়াদের জোহরের নামাজ পড়ে এসে বকশিশ দেওয়ার কথা বলেন।
দুপুর পৌনে ২টার দিকে মোশারফ নামাজ পড়ার জন্য হাসপাতালের মসজিদে যান। তাঁর আসতে বিলম্ব হওয়ায় নার্স ও আয়ারা শিশুটির মা, খালা, দাদি ও নানির কাছে বকশিশ দাবি করেন। শিশুটির মা ও খালা তাঁদের জানান শিশুর বাবা নামাজ থেকে এলেই বকশিশ দেওয়া হবে। কিন্তু নার্স ও আয়ারা তাতে রাজি না হয়ে শিশুটির নাক থেকে অক্সিজেনের পাইপ খুলে নেন।
অক্সিজেন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে শিশুটির শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তখন শিশুটির মা, খালা, দাদি নার্স ও আয়াদের হাতে-পায়ে ধরে আবারও অক্সিজেন লাগাতে বলেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে নার্স ও আয়ারা দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে শিশুটি মারা যায়।
শিশুর পরিবার দাবি করে, বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ থেকে দেখা গেলেও তত্ত্বাবধায়ক বের হয়ে সেখানে উপস্থিত হননি।
শিশুটির মা আনিছা বেগম বলেন, আমরা একাধিকবার নিষেধ করার পরও নার্স ও আয়া জোর করে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই আমার সন্তানের মৃত্যু হয়। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
শিশুটির বাবা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, হাসপাতালের নার্স ও আয়ার অবহেলায় আমার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমি দোষীদের বিচার দাবি করছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নার্স রিমা আক্তার বলেন, বকশিশ চাওয়ার ঘটনা সত্য নয়। মূলত অন্য একটি গুরুতর অসুস্থ শিশুর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারটি স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগে থেকেই শিশুটির অবস্থা খারাপ ছিল। তাকে রংপুর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নবিউর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে রবিবার ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এতে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. খায়রুন্নাহারকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে আবাসিক চিকিৎসক ডা. হারুনর রশিদ ও মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমন কুমার প্রামাণিককে সদস্য করা হয়েছে। তদন্তে হাসপাতালের কারো গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবাসিক চিকিৎসক ডা. হারুনর রশিদ বলেন, বকশিশ নেওয়ার মতো ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এজাতীয় কোনো অভিযোগও আসেনি। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার। কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী।
একইভাবে শনিবার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার উজির ধরণী গ্রামের ইয়াকুব আলীর দুই মাস বয়সের শিশুর পরিবারের কাছ থেকে বকশিশ না পাওয়ায় তারও নাক থেকে অক্সিজেনের পাইপ খুলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই শিশুটিও অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে হাসপাতালে মারা যায় বলে পরিবার দাবি করে। এ ব্যাপারে আবাসিক চিকিৎসক বলেন, শিশুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এই অভিযোগের সত্যতা নেই। এটি তদন্তের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন