মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হতদরিদ্র বাবা-মা। বাবা মায়ের যত দুশ্চিন্তা মেয়েকে ঘিরে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামনাকৃতির)। প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বাবা-মা। মেয়ের চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন দরিদ্র পরিবারটি।
মেয়ে চাঁদনী খাতুন (১৪) উচ্চতা দুই ফিট আট ইঞ্চি। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ গ্রামে মেয়েটি তার পরিবারের সঙ্গে থাকেন। বাবা চাঁন মিয়া দিন মজুরে এবং মা খাতুন গৃহিণী। তিন ভাই ও বোনের মধ্যে সবার ছোট। পড়াশুনায় মেধাবী না হলেও মোটামুটি ভালো। স্থানীয় মিয়া পাড়া নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
চাঁদনীর বাবা চাঁন মিয়া বলেন, চাঁদনী জন্মের সময় সুস্থ সবল ছিল। এরপরই নানান মুখী সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের নুন আনতে পানতা ফুড়ায় সেখানে কিভাবে তার চিকিৎসা করাই। সামর্থ্য না থাকায় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার ফলে তার বাড়ন্ত কমে যায়। তবে এখন সুস্থ হলেও উচ্চতা আশানুরূপ হয়নি। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাঁটছে।
এক দিকে মেয়ের চিন্তা অন্যদিকে সংসার চালানোটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক কষ্টে মেয়েটির প্রতিবন্ধী ভাতাটুকু করে নিতে পেরেছি। এতো কষ্ট থাকার পরেও আমাদের ভাগ্যে কোন ধরণের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি।
মেয়েটির মা রত্না বেগম বলেন, আগে অনেক কিছুই ছিল, তবে সব কিছুই নদীয়ে কেড়ে নিয়েছে। সামনে ঈদ আসছে, মেয়েটার জন্য আদৌ নতুন পোশাক কিনতে পারব কি না। রমজান মাসে মানুষ কত কি ভালো মন্দ খাচ্ছে। তবে কোন রকম ডাল-ভাত খেয়েই দিন পাড় করছি।
মা আরও বলেন, মেয়েটির সমস্ত কাজ করে দিতে হয়। বাথরুমে পানি পৌঁছে দেওয়া, হাত-মুখ ধুয়ে দেওয়া, গোসল করানো, পোশাক পরিধান করা এবং অনেক সময় খাবারও মুখে তুলে দিতে হয়। এমনকি একজনের সাহায্যে স্কুলেও যায়।
তিনি যোগ করেন, মেয়েটি এতো নার্ভাস, মনে সব সময় ভয় কাজ করে। অপরিচিত কেউ আসলেই যেন মুখ থেকে কথা বের হয় না। ভয়ে চোখ থেকে পানি বের হয়। সমস্ত কাজ কর্মের সবটাই মা হয়ে করতে হচ্ছে। আমি যখন থাকবো না তখন যে কি হবে শুধুমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন।
চাঁদনীর আন্টি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা খাতুন বলেন, প্রতিদিন আমার সাইকেলে করে চাঁদনী স্কুলে যায়।আমাকে ছাড়া কখনও স্কুলে যায় না। কোন কারণে তার মা অথবা বাবা যদি স্কুলে নিয়ে যায় সেই দিন তার মনটা মোটেও ভালো থাকে না।
চাঁদনীর দাদী চায়না খতুন ও চাচি শায়না বেগম বলেন, চাঁদনীর জন্য তার বাবা-মা সব সময় দুশ্চিন্তা করে। অনেক কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ আছে বলে সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। তবে সে যে খুব মেধাবী তা কিন্তু নয়। তারপরও আমরা চাই চাঁদনী পড়ালেখা করে অন্তত নিজের জীবনটা যেন চালাতে পারে৷ আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।
জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজিবর রহমান চাঁদনী বলেন, উচ্চতা কম হওয়ায় বাবা-মা তাকে নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তা করে। তার সাফল্য কামনা করছি। একইসঙ্গে পরিবারটিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। ভবিষ্যতেও আরও সহযোগিতা করা হবে।
শিমুলবাড়ী মিয়াপাড়া নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়েরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম জানান, চাঁদনী নামের শিক্ষার্থীর উচ্চতা ২ ফিট ৮ ইঞ্চি। তার বাবা খুবই দরিদ্র। বাকী সব শিক্ষার্থীর চেয়ে সে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। তারপরেও সে স্কুলে নিয়মিত আসে এবং পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ আছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থা উপবৃত্তির ব্যবস্থা করায় সে নিয়মিত উপবৃত্তি পাচ্ছে। তার জন্যে আরও কিছু সহায়তা করা গেলে তার বাবার জন্যে ভালো হতো। আমরা চাই চাঁদনী পড়ালেখা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হোক। তার সাফল্য কামনা করছি।