দিনাজপুর: চারদিকে ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুর বাজছে। উলুধ্বনিও দিচ্ছেন অনেকেই।
এদিন সকাল থেকে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। চলে বিকেল পর্যন্ত। বটপাকুড়ের বিয়েতে বটগাছকে কনে আর পাকুড় গাছকে বর হিসেবে সাজানো হয়। বিয়েতে কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন সুব্রত চন্দ্র রায় আর ছেলের বাবা ছিলেন একই এলাকার অনীল চন্দ্র রায়। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী।
কথা হলে কন্যাদান (বটগাছ) করা সুব্রত চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি এ যাবত শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। কোনো দিনও সেই বিয়ে দেখিনি। আজকে নিজেই কন্যার বাবা হিসেবে বটগাছকে সম্প্রদান করছি। আমাদের পরিবারের সবার মঙ্গল কামনায় এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ’
ছেলের বাবা (পাকুড় গাছ) অনীল চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার ঠাকুরবাড়িতে বট ও পাকুড় গাছ প্রাকৃতিকভাবেই জন্মেছিল। তখন আমার মা এই গাছগুলোকে বিয়ে দিতে বলেছিলেন আমাদের সুফল হওয়ার জন্য। তারপর আমরা দুজন মিলে বট-পাকুড় গাছ দুটি এখানে রোপণ করি। আজকে সেই গাছেরই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের সব মঙ্গল হবে। আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিপদ-আপদ দূর হবে। ’
বিয়ে দেখতে আসা অমিরা রায় বলেন, ‘মুই ছোট থাকিতে একবার বট-পাকুড়ের বিয়া দেখিছুনু কিন্তু আগের কথা খেয়াল (স্মরণ) নেই। আর আইজকা আবার দেখিবার সুযোগ হলি। নিজের যাতে পুণ্য হয় সেইজন্যে এই বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলেমেয়ে যাতে ভালো থাকে, পরকালে যাতে স্বর্গে জায়গা পাওয়া যায় সেইজন্য বট-পাকুড়ের বিয়া হয়। ’
বিয়েতে আসা আষাঢ়ু চন্দ্র রায় বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেকেই আবার ছেলে বা মেয়ে সন্তান লাভের আশায় এই বিয়ে দেয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে। ’
প্রথমবারের মতো বট-পাকুড়ের বিয়ে দেখতে এসেছেন রত্না রায়।
কথা হলে তিনি বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে এটা শোনার পর থেকেই অনেক কৌতূহল হচ্ছিল মনের মধ্যে। আগে অনেকবার শুনেছি বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা। কিন্তু এই প্রথমবার নিজ চোখে বিয়ে দেখলাম। বিয়েতে অনেকের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হলো। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলাম। বর-কনের বিয়ের মতোই সব আয়োজন ছিল বিয়েতে। আমার অনেক ভালো লেগেছে বট-পাকুড়ের বিয়েতে আসতে পেরে। ’
বিয়ের পুরোহিত রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোনো অভাব বা দুঃখ-কষ্ট তাদের জীবনে আসবে না। এজন্য আজকে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিচ্ছেন রুদ্রপরের অনীল ও সুব্রত চন্দ্র রায়। ’