সকাল থেকে বাজানো হচ্ছে ঢাক-ঢোল ও সানাই। পাত্র-পাত্রী উভয় পক্ষ দিচ্ছেন উলুধ্বনি। পুরোহিত পাঠ করছেন মন্ত্র। পাত্র-পাত্রীকে এক পলক দেখার জন্য ভিড় করছেন অনেকেই। আয়োজনে নেই কোনো কিছুর কমতি। কিন্তু এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়, বিয়েটি আয়োজন করা হয়েছে বট আর পাকুড়ের।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল থেকে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী হিরাবাগানের মাঠে এ ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে আয়োজন করা হয়।
সকাল থেকে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা; যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বটপাকুড়ের বিয়েতে বটগাছকে কনে আর পাকুড় গাছকে বর হিসেবে সাজানো হয়। বর ও কনেকে এক পলক দেখার জন্য ভিড় করতে থাকে আশপাশের লোকজন।
অনেকে সাজগোজ করে এসেছে বিয়ে বাড়িতে। সকাল থেকে নানান আনুষ্ঠানিকতা করতে থাকে আগতরা। ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ে দেখে সবাই-ই খুশি। প্রায় ৩০০ মানুষের আয়োজন করা হয়েছে বলে বর ও কনের পরিবার জানিয়েছে।
বিয়েতে বরের বাবা হিসেবে জগদীশ চন্দ্র মোহন ও কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন কালু চন্দ্র মোহন্ত। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
স্থানীয় বাসিন্দা সমাপ্তি অধিকারী বলেন, সাধারণত বট আর পাকুড়ের বিয়ে কোথাও দেখা যায় না। এই প্রথম বট আর পাকুড়ের বিয়ে দেখলাম। খুব ভালো লাগল। মানুষ যেভাবে বিয়ে করে, ঠিক সেভাবে বট আর পাকুড়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো।
দর্শনার্থী চন্দ্রনা মোহন্ত বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমাদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেকেই আবার ছেলে বা মেয়েসন্তান লাভের আশায় এই বিয়ে দেয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে। আজ খুব আনন্দে আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান করেছি।
বরের বাবা জগদীশ দেবনাথ বলেন, আমরা চারটি মেয়ে, একটিও ছেলে নেই। তাই আমি এই বিয়েতে বরের বাবা হয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের সব মঙ্গল হবে। আমাদের পরিবারের বিপদ-আপদ দূর হবে।
কন্যাদান করা কালু চন্দ্রমোহন বলেন, আমার কোনো কন্যা নেই। আমি এ যাবত শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। কোনোদিনও সেই বিয়ে দেখিনি। আজকে নিজেই কন্যার বাবা হিসেবে বটগাছকে সম্প্রদান করছি। সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিয়ের পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোনো অভাব বা দুঃখ-কষ্ট তাদের জীবনে আসবে না। তাই আজকে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।