কুড়িগ্রাম জেলায় নদনদীতে অসময়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদে এ ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তীরবর্তী মানুষগুলো। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শতাধিক বিঘার ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের রসূলপুর এলাকায় ইতোমধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদেও থাবা মেরে গ্রাস করে ফেলেছে। শত বিঘা ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক ও দশটির মত বসতভিটা ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে রসূলপুর জামে মসজিদ, রসূলপুর একটি নুরানি হাফেজিয়া মাদরাসা, রসূলপুর ঈদগাহ মাঠসহসহ বেশ কটি বসতঘর।
সরেজমিনে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরেই জেলার ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে তীব্র নদী ভাঙন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এলেই ব্রহ্মপুত্র নদসহ সবকটি নদনদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। আর নদী ভাঙনের শিকার হন এ এলকাার নদী তীরের মানুষজন।
জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা ও হাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ নদী ভাঙন আতংকেই দিন কাটাচ্ছেন। বছরের পর বছর নদী ভাঙনের ফলে কৃষিজমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই অসহায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিবছর নদী বেশি ভাঙে বর্ষা মৌসুমে। কিন্তু এবার অসময়েই শুকনো মৌসুমেও তীব্র নদী ভাঙনে দিশেহারা এখানকার মানুষ।
বর্তমানে নদীতে পানি অনেকটা কমে গেছে। আবার নেই তেমন কোন স্রোত। কিন্তু এরপরও ভাঙন থেমে নেই। অনেকের ঘরবাড়ি কয়েকবার নদীতে ভেঙে গেছে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে কোন লাভ হয় না। অনেকেই ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেন।
উলিপুরের ভাঙনকবলিত রসূলপুর এলাকার মিজানুর রহমান ও হেলাল উদ্দিনসহ ভাঙন কবলিত মানুষজনের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দিক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে অসময়ে নদী ভাঙনের তীব্রতা আমাদের এ এলাকায় বেশি দেখা দিয়েছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে একদিন বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন উলিপুরের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার বাড়িসহ অন্তত ১০জনের বাড়ি ও প্রায় শত বিঘা জমি ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুকনো মৌসুম, এই অসময়ে নদী ভাঙন কখনওই কাম্য নয়।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী ভাঙনে সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তা কোন কাজেই আসছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এদিকে,আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে চলে আসছে বর্ষা মৌসুম। এখন শুষ্ক মৌসুমে যদি স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন প্রতিরোধে কাজ না করা হয় তবে এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অনেক এলাকা নতুন করে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র নদের কড়াল গ্রাসের মুখে পড়বে।
হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা ছাড়া স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখনই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিলে সামনে বর্ষায় মারাত্মক অবস্থা বিরাজ করবে।
নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান,ধরলা তীরের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায়, স্যান্ড সিমেন্ট এবং স্যান্ড ব্যাগ দিয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ শুরু ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। ওই তিনটি ইউনিয়নের দুটিতে চাহিদা দিয়েছি। এটির বাজেট এলে দ্রুতই ১০দিনের নোটিশে টেন্ডার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হবে।