কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ১২ দিন ধরে জেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২টার তথ্যানুযায়ী কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্ট বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ মিলিমিটার।
এর ফলে ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় তীব্র হয়ে উঠেছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ৩ শতাধিক চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ। চরাঞ্চলের অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার পরিজনসহ গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থান করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। আবার অনেক পরিবার ঘরের মাচান উঁচু করে ও নৌকায় বসবাস করছেন। এখানে সরকারি-বেসরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম জানান, ঘরের ভেতর চৌকি উঁচু করে কোনো রকমে আছি। একবেলা খেয়ে তিন বেলা না খেয়ে পার করতে হয়। এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি।
একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী পোড়ার চরের মফিজল জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পানির মধ্যে আছি। এর মধ্যে মাত্র একবার ৫ কেজি চাল ও ডাল পেয়েছি। এরপর আর কিছুই পাইনি। এই ৫ কেজি চাল ২-৩ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত আমির হোসেন জানান, প্রায় ১২-১৩ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। ঠিকমত রান্না করা যাচ্ছে না। বাজার থেকে কাঁঠাল ও শুকনো খাবার কিনে এনে খাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাইনি।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টা জেলার নদ-নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।
নাগেশ্বরীর ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি। তাদের তালিকা করে পাঠিয়েছি। মাত্র ৪ টন চাল দিয়েছে। যা সব পরিবারকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সবাইকে দিতে হলে আরও সহায়তা দরকার।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৫শ মেট্রিক টন চাল, ৩৫ লাখ টাকা ও ২৩ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।