কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পরপর দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পারিবারিক নির্যাতন ও অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাতে ক্লিনিক থেকে রৌমারী থানায় ছুটে যান অন্তঃসত্ত্বা নারী মোছা. আমেলা বেগম (৩৭)। পরে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রৌমারী থানা পুলিশের সহায়তায় তার পারিবারিক সমস্যার সমাধান হয়।
আমেলা বেগম রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দিনমজুর আমিনুল ইসলামের স্ত্রী।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপ কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এই দম্পতির ঘরে ১১ ও ৯ বছর বয়সের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গর্ভের সন্তানটিও মেয়ে হওয়ার খবরে দুশ্চিন্তায় পড়ে থানায় যান। এ ঘটনার পর শেরপুরের একটি ক্লিনিকে সোমবার রাতে সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করেন আমেলা।
আমেলার অভিযোগ, আগের দুটি মেয়ে সন্তান হওয়ার পর আবারও গর্ভে মেয়ে সন্তান আসায় স্বামী আমিনুল নাখোশ ছিলেন। তাকে ও তার অনাগত সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন।
এজন্য নিজের ও সন্তানের জীবন বাঁচাতে তিনি ক্লিনিক থেকে সোজা থানায় গিয়ে ওসির দ্বারস্থ হন। পরে পুলিশ তাদের সমস্যার সমাধান করে।
আমেলা বলেন, ‘ঝামেলা ছিল। অহন মিইটা গেছে। অহন ভালা আছি।’
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে আমেলার মা মোছেয়া খাতুন বলেন, ‘রাইতে আমেলার মেয়ে বাচ্চা হইছে। অহন মা মেয়ে ভালা আছে।’
আমেলা বেগমের স্বামী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা খোঁজ নেন। তার মাসহ (আমেলার মা) আমি নিজে রৌমারীর নিরাময় ক্লিনিকে গিয়ে তাকে ভর্তি করাইছি। তার ভাইও ছিল। ব্লাডের দরকার ছিল তাও জোগাড় করাইছি। সে বলে, ভালা মানুষ লাগবো।
না হইলে অপারেশন করাইবো না। এই বইলা হঠাৎ সে ক্লিনিক থেকে উধাও হয়া যায়। ফোন দিলেও ধরে না। পরে বিকেলে পুলিশ নিয়া ক্লিনিকে আহে।’
কন্যা সন্তানের জন্য স্ত্রী ও সন্তানের জীবন হুমকির প্রশ্নে আমিনুল বলেন, ‘এলাকায় খোঁজ নেন আমি কেমন। মাইনষের পরিবারে ঝামেলা হইতে পারে না? আমার স্ত্রী-সন্তান আমি চিকিৎসা না করাইলে কে করাইবো! হেয় (আমেলা) হুদাই গিয়া পুলিশে খবর দিছে। তার মা সঙ্গে ছিল তারেও জিগান।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে হওয়ার জন্য মায়ের দায় নাই। এটা ডাক্তার আমারে বুঝাইছে। ওসি স্যারও বুঝাইছে। আমি সেটা বুঝি। কিন্তু স্ত্রীকে কোনো হুমকি দেইনাই। তার কী সমস্যা এলাকার মানুষরে জিগাইলে জানতে পারবেন।’
রৌমারীর নিরাময় হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টাফ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ওই নারীর স্বামী, মা, ভাই ও স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন মিলে আমাদের এখানে এসেছিলেন। কিন্তু ওই নারী বলছিলেন ডাক্তার নাকি তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলবে। এজন্য তিনি পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। পরে শেরপুরের একটি ক্লিনিকে তার সিজার হয়েছে শুনেছি।’