বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হন দিনাজপুরের দিনমজুর আব্দুর রশিদ। দারিদ্রতা আর অর্থের অভাবে তিন দিনের সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি জানতে পেরে আব্দুর রশিদের চিকিৎসার জন্য জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং জেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এদিন রাতের দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ টিম পাঠিয়ে শিশুটিকে ফিরিয়ে এনে মায়ের কোলে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের দিনমজুর মো. আব্দুর রশিদ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় গত ৮ আগস্ট তিনি দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিকে তার গর্ভবতী স্ত্রী দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ৪ আগস্ট থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর ৯ আগস্ট তিনি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে নবজাতক শিশুটিকে কুড়িগ্রামে দূর সম্পর্কিত এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন।
দত্তক গ্রহণকারী ব্যক্তি আহত মোহাম্মদ আব্দুর রশিদের চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে সোমবার রাতেই কুড়িগ্রামে একটি টিম পাঠিয়ে শিশুটিকে ফিরিয়ে এনে মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে।
নবজাতকের মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘৪ আগস্ট আন্দোলনে আমার স্বামীর গুলি লাগে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে আমার স্বামীর অপারেশন হয়। অপারেশনের পর আমার স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এর মধ্যেই আমার বাচ্চা হয়। সেই সময় হাতে টাকা ছিল না।
স্বামীর চিকিৎসা করাতে হবে, তাই তিনদিনের বাচ্চাকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিছি। সেই টাকা দিয়ে স্বামীর চিকিৎসা করছি। খারাপ তো লাগবে। কিন্তু সেই সময় কোনো উপায় ছিল না। স্বামীকে তো বাঁচাতে হবে। স্বামীকে আরও অপারেশন করতে হবে। সুস্থ হতে আরও দু-এক বছর লাগবে। নিজের কোনো জায়গা-জমি নাই। মানুষের বাসায় থাকি। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার স্বামী যেন সুস্থ হয়ে কিছু করতে পারে।’
আহত আব্দুর রশিদ বলেন, ‘৪ আগস্ট স্ত্রীর প্রসবের ব্যথা ওঠায় হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমি টিকেট কাউন্টারের সামনে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হই।
পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। আমি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসি। এর মধ্যে আমার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। বাসায় তিনদিন ছিলাম। পরে গ্রামবাসী সহযোগিতা করে আমাকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে। হাসপাতালে অপারেশন করা হয়েছে।’