এত আয়োজন, আড়ম্বর করে যে শারদীয় এলো, সে পূজা শেষ। ফাঁকা মণ্ডপে একা একা পুড়তে থাকা প্রদীপ, রাস্তাজুড়ে বাঁশ আর রঙিন কাপড়ের স্তূপ মনে করিয়ে দেয় দুর্গা এবার যাওয়ার মুখে। অথচ উৎসব শেষের এই বিষণ্নবেলাতেই একটি গ্রাম সেজে উঠছে দুর্গোৎসবে। এটি বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রাম। পূজা ঘিরে গ্রামে বসেছে মেলা। করোনা আতঙ্কের জেরে ছেদ পড়েনি। মেলাটি এবারেও নিয়ে এসেছে অফুরন্ত আনন্দের ছোঁয়া।
সরকারপাড়া ইছামতি নদীর তীরে এক শ বছরের বেশি সময় ধরে বসছে বউ মেলাটি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও দুর্গাপূজাকে ঘিরে মেলা বসেছে। মেলায় আসা মানুষের ৯৫ শতাংশই নারী। এ জন্য এটি বউ মেলা নামে পরিচিত। মেলায় সব ধর্মের মানুষের মহামিলন ঘটে। মেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক গভীর মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয়। আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসেছে মেলায়। এলাকার বাসিন্দারা অপেক্ষায় থাকে এ দিনটির।
রবিবার মেলায় গিয়ে দেখা যায়, দেবীদর্শনের পাশাপাশি সবাই ভিড় জমাচ্ছেন মেলাতেও। পণ্যের পসরা নিয়ে মেলায় এসেছে নানা গ্রামের ব্যবসায়ীরা। মিষ্টান্ন, শিশুদের খেলনা, চুড়ি, দুল, ফিতা, আলতা থেকে ঘর গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিস। জিলাপি ভাজা হচ্ছে কয়েকটি দোকানে। বিক্রি হচ্ছে ধুমসে। মেলায় এসেছেন অনিতা রানী দাস। তিনি বলেন, পুরানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে সরকারপাড়া বউ মেলাটি। আমি আসি ঐতিহ্যের গরম জেলাপি নিতে।
মেলায় সরু রাস্তায় চলতে হয় লাইন ধরে। হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দেখা যায়, এক দোকানি ঝুড়ির মধ্যে রসুন, কাঁচা মরিচ, পটল, লেবু, আতা, কমলা আর ছোট্ট কিছু পাখি নিয়ে পসরা সাজিয়েছে। তবে এগুলো মাটির তৈরি। মাটির এই খেলনাগুলোর প্রতি আগ্রহ অনেকেরই। প্রভাতি রানি দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তিনি বলেন, এই জিনিস সব সময় পাওয়া যায় না। দেখতে ভালো লাগে। ছোটবেলার মেলার কথা মনে পড়ে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অনেকে ঘুরতে এসেছেন একদিনের এই মেলায়। বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন মিল্লাত হোসেন। তিনি বলেন, পুরনো স্মৃতির পটভূমিতে নতুন করে আঁচড় কাটে মেলাটি। তাই বছর ঘুরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি। বৈশাখ আর পূজা ছাড়া এমন আমেজ তো পাওয়া যায় না।
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি সুধীর কুমার সরকার বলেন, এ মেলা আমাদের উৎসবের আমেজ আরো বাড়িয়ে দেয়। রবিবার বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন। মেলাও ভাঙবে। আবার আগামী বছর প্রতিমা বিসর্জনের দিন বসবে এই মেলাটি।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন