পবিত্র রমজান মাস ঘিরে বগুড়ায় আগেভাগেই বাড়তে শুরু করে ফলের দাম। প্রতি বছর রোজার সময় ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর রোজায় নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে আছে খেজুর। বগুড়া শহরের সাতমাথায় পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন ফলের মার্কেটের ১২টি দোকানে খেজুর, আপেল, মাল্টা, কমলা, আঙুরসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার বিভিন্ন ধরণের ফল মজুত করেন ব্যবসায়ীরা।
মধ্যরাতে হঠাৎই সেই ফলপট্রিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ১২টি দোকানে মজুত রাখা প্রায় দেড় কোটি টাকার ফল ও নগদ টাকা আগুনে পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট প্রায় আধাঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মাত্র কয়েক মিনিটের আগুনে ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে বগুড়ার সাতমাথা সপ্তবদী মার্কেটের পশ্চিমপাশে স্টেশন রোড এলাকার ফলের মার্কেটে আগুন লাগে। ব্যবসায়ীরা কেউই মজুত ফলগুলো নিরাপদে বের করে আনতে পারেনি। প্রতিটি দোকানে খেজুরসহ নানারকম ফল মজুত ছিল। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মঞ্জিল হক জানান, প্রতিটি দোকানে বৈদ্যুতিক বাতি ছিল। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করছেন। অন্য কোনো কারণে অগ্নিকান্ড ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তদন্তে অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
একাধিক ফল ব্যবসায়ী দাবি করেন, দোকানে বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়া কিছুই নেই। শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ড হয়নি। সারাদিন বেচাবিক্রি শেষে পরের দিন আড়তে গিয়ে ফল কিনতে হয়। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ব্যাংক বন্ধ ছিল। অধিকাংশ দোকানে বিপুল পরিমাণ ফল ছাড়াও বেচাবিক্রির নগদ টাকা ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। মহাজনদের টাকা দেওয়ার কথা ছিল, ব্যাংকেও ঋণ। এখন পথে বসে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত সাগর ও লাল মিয়াসহ কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি দোকানে গড়ে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার খেজুর ও বিভিন্ন ফল ছিল। শুক্রবার বেচাবিক্রি শেষে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা বাড়িতে চলে যান। ঘণ্টাখানেক পর আগুন লাগার খবর পেয়ে দোকানে গিয়ে দেখেন, সব শেষ। তারা এখন নিঃস্ব।
ফল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আনাম তুষার বলেন, আগুনে ব্যবসায়ীদের অন্তত দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সমিতি সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকবে।
এদিকে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ফলের দোকানগুলো পরিদর্শন করেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।