আজ শনিবার (২৮ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে শোকের মাসের ভার্চুয়াল ধারাবাহিক আলোচনার সমাপনী পর্ব বিকেল চারটায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত সদস্য, সাবেক রাকসুর ভি,পি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত সাধারণ সম্পাদক জননেতা এডভোকেট নুরুল ইসলাম ঠান্ডুর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের বাস্তবায়নই তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শণের উপায়।
উক্ত ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমাযুন সহ সভাপতি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং চেয়ারম্যান আইন উপকমিটি বাংলাদেশের আওয়ামিলীগ। প্রধান আলোচক হয়ে উপস্থিত ছিলেন ডক্টর আতিউর রহমান, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং সাবেক গভর্ণর বাংলাদেশ ব্যাংক। সভা পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন এর প্রতিষঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি ড. মশিউর মালেক এবং যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ ওসমানী।
উক্ত সভায় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সমন্বয়কারী এস এম আজাদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ – এই শব্দ তিনটি মূলত সমার্থক৷ এই তিনটির যে কোনো একটিকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করার কোনো সুযোগ নেই৷ এই তিনটি শব্দের যে কোনো একটি যখন আক্রান্ত হয়েছে, তখনই বাঙালির জীবনে জাতীয় দুর্যোগ নেমে এসেছে৷
আওয়ামী লীগকেই দায়িত্ব নিতে হবে তারা গণমানুষের শেখ মুজিবকে ১৬ কোটি মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের ঐতিহাসিক ঋণ শোধ করবে৷ এই দায় তাদের মেটাতেই হবে, কেন না একমাত্র বঙ্গবন্ধু বাঁচলেই বাঁচবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ৷
তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। বাঙালি জাতিকে দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে। আর এসব করতে গিয়ে তিনি যা যা করেছেন, সেটাই তার আদর্শ। এ আদর্শের মূল কথা ত্যাগ আর সংগ্রাম। যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ, মোহ, পদ-পদবির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে আমরা দেখতে পাই, তিনি কখনও ক্ষমতার পেছনে দৌড়াননি। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত-উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। আর তাতে অবিচল থেকে তিনি সমসাময়িক আরও অনেক বড় রাজনীতিবিদকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা যায় এভাবে- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়া, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা আর মানুষের জন্য ভালোবাসা। আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা, সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের জনগণের সেবকে পরিণত করা, স্বাধীনতার সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করা, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করা, দেশ কী দিল, সেটা না ভেবে দেশকে কী দিলাম নিশ্চিত করা, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, যা অন্যের স্বাধীনতা বিনষ্ট না করে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিচের দিকে তাকিয়ে চলা যাতে হোঁচট না খেতে হয়। বঙ্গবন্ধু তার আদর্শকে সারা জীবন কাজের মাধ্যমে, আচরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের পদ নিয়ে ত্যাগের রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। যেটা শুধু তার নির্লোভ মানসিকতাই নয়, দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতি ও মানুষের প্রতি কাজ করার দৃঢ়প্রত্যয় তুলে ধরে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, বঙ্গবন্ধু কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর নেতা নন, তিনি এদেশের সকল মানুষের হৃদয়ের নেতা, জনতার নেতা৷ শত বিপদ, নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল-জুলুম, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তিনি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন৷ একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন৷ তাঁর কাছে এই দেশের সবাই কৃতজ্ঞ৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই নানা ভাবে তাদের জাতির মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হয়৷ এই উদযাপনের অন্যতম লক্ষ্য থাকে কৃতি মানুষটির জীবনাদর্শ জনমানে ছড়িয়ে দেওয়া৷ নতুন প্রজন্মকে তার গুণে গুণান্বিত হতে উদ্বুদ্ধ করা৷ আমাদের এখানে অনেকেই ঢালাও ভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের কথা বলেন, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও মূল্যবোধ বুঝতে গেলে শেখ মুজিবুর রহমান রচিত তিনটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘কারাগারের রোজনামতা’ এবং ‘আমার দেখা নয়া চীন’ পড়তে হবে৷ এই গ্রন্থগুলির ছত্রে ছত্রে তার জীবন দর্শন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷
তিনি বলেন, শোকের মাস আগস্টের ২৮তম দিন আজ। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শোকের কর্মসূচির মাধ্যমে পুরো মাস তাকে স্মরণ করছে। পথে-ঘাটে, পাড়া-মহল্লায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান, মিছিল-স্লোগান ও তার ভাষণ শোনা যাচ্ছে। জাতীয় জীবনে তার আদর্শের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সত্যিকার সম্মান জানানো সম্ভব।দেশের জ্ঞানী-গুণিদের মতামত ও পরামর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার,শাস্তি প্রদান ও তাঁর আজীবনের চাওয়া পূরণ করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন, আন্তরিকতার সাথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা৷ কেননা তার স্বপ্নের বাংলা গড়াই চূড়ান্ত অর্থে তাঁকে সম্মান জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায়৷
উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও দেশ, বিদেশের নেতৃবৃন্দ।