শনিবার (২২ মে) বিকেল ৪টায় প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর প্রাক-বাজেট আলোচনা সংগঠনের চেয়ারম্যান এস এম আজাদ হোসেন এর সভাপতিত্বে শুরু হয়। সভা সঞ্চালনা করেন ফোরাম সদস্যসচিব রুহি দাস। আলোনায় অংশ নেন ফোরাম নির্বাহী সদস্য সামসুন নাহার আজীজ লীনা,আসমা আক্তার, আঞ্জুমান আরা, রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, কিংসু মজুমদার, পান্না হাসান, বশির আহমেদ চঞ্চল, মোস্তারী বেগম, সিজুল ইসলাম, আনিকা আসলাম, মিজানুর রহমান, মনির-ই মোস্তফা,শোভন লাল সাহা, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী ৫ জুন বিকেলে বাজেট পরবর্তী আলোচনা এবং বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সেমিনার একত্রে দুই সেশনে অনুষ্ঠিত হবে।প্রথম সেশনে বাজেট আলোচনায় একজন বিশিষ্ঠ অর্থনীতিবীদ এবং পরিবেশ দিবসের আলোচায় একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আলোচনা করবেন।পরিবেশ দিবসের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফোরাম নির্বাহী সদস্য সামসুন নাহার আজীজ লীনা।এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৯ জুন মেহেরপুরে স্থগিত হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফোরাম চেয়ারম্যান এস এম আজাদ হোসেন বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে প্রায় ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেটেও (প্রস্তাবিত) ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকার মত। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ঘুরে ফিরে ৭ শতাংশের ঘরেই থাকবে বলে জানা গেছে। মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার চেষ্টা চলবে ৫-এর ঘরে।
এদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত এডিপি অনুমোদন করেছে এনইসি। তার মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার জোগান দেয়া হবে।
নতুন এডিপির বরাদ্দ মোট ১৫টি খাতে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া ১০টি খাতের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি (২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ), বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৪৫ কোটি ৮৬৮ কোটি (২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ), গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে প্রায় ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি (১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ), শিক্ষা খাতে প্রায় ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি (১০ দশমিক ২৯ শতাংশ), স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি (৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ), স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে প্রায় ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি (৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ), পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি খাতে প্রায় ৮ হাজার ৫২৬ কোটি (৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ), কৃষি খাতে প্রায় ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি (৩ দশমিক ৪০ শতাংশ), শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে প্রায় ৪ হাজার ৬৩৮ কোটি (২ দশমিক ০৬ শতাংশ) এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা (১ দশমিক ৫৯ শতাংশ)।
তিনি চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামনে রেখে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য কয়েকটি প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরেন।তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এখনো কোভিড-১৯ এর প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ঊঠতে পারেনি এরমধ্যে চলে এসেছে দ্বিতীয় ঢেউ।ফলে-
নতুন বাজেটে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।চাকরি হারানো বেকার শ্রমিকদের নগদ সহায়তা প্রদান করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে-বিশেষ করে যাদের ব্যাংক হিসাব নেই এবং ইতোমধ্যে পুজি হারিয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বল্প-নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম শিক্ষা সরঞ্জাম বিনামূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসামগ্রী বিতরণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি সারা বছর অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। যেকোন জরুরী অবস্থায় দরিদ্র মানুষদের যাতে সহায়তা করা যায় বাজেটে সেজন্য থোক বরাদ্দ বাড়াতে হবে।সামাজিক নিরাপত্তার আওতা দ্বিগুণ করতে হবে।
গ্রামাঞ্চলে চালু আপদকালীন কর্মসংস্থান প্রকল্প ইজিপিপি’র মত শরাঞ্চলেও অনুরুপ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।সার্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দেশীয় শিল্পের জন্য আমদানীকৃত কাচামালের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। দেশে শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত-চাকরিচ্যুত-বিদেশফেরত প্রায় ৪কোটি বেকার যুবকদের তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান বা আয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।
এরপর তিনি সকলের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ কামনা করে আগামী ৫ জুন সেমিনারে দেখা হবে এই প্রত্যাশায় সভার কার্যক্রম শেষ করেন।