English

28 C
Dhaka
সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫
- Advertisement -

লন্ডনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির নেপথ্যে

- Advertisements -

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত কয়েক বছরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার বিদেশ যেতে চাইলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাতে সম্মতি দেয়নি। চিকিৎসা হয়েছে দেশেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাস তিনেক আগে (৭ জানুয়ারি) লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। সেখানে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়ে এখন স্থিতিশীল আছে।

সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মনিটরিং ও পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্য খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির পথে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ম্যাডাম তো দেশে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। লন্ডনে মুক্ত পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার উন্নতি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। তার চিকিৎসায় দেশীয় চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। শুধু যে চিকিৎসা দেশে হয় না, তার জন্যই লন্ডনে যাওয়া।’

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্য বঞ্চিত ছিলেন। প্রত্যেক মানুষের ভালো থাকার অন্তরালে যে মানসিক প্রশান্তির একটি বিষয় থাকে সেটি থেকে দূরে ছিলেন তিনি। লন্ডনে ভালো চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে বেশ উৎফুল্ল তিনি।

ঈদের দিন তার বড় সন্তান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনের বাসায় মা ও স্ত্রী-সন্তানসহ একটি ছবি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানেও খালেদা জিয়াকে বাহ্যিকভাবে প্রফুল্ল দেখা যায়। বিগত কয়েক বছরে তার এমন অবস্থা দেখা যায়নি বললেই চলে। শারীরিক অবস্থার উন্নতির পেছনে যে পরিবারের কাছে থাকারও একটি বড় ভূমিকা আছে সেটা অনুমেয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি চিকিৎসা সংক্রান্ত সব বিষয়ে দেখভাল করেন।

লন্ডন থেকে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওনাকে টাইম টু টাইম দেখছেন। ম্যাডামের স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’

লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর ডা. জাহিদ হোসেন ওই সময় কিছু আপডেট জানিয়েছিলেন। তিনি সে সময় জানান, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস, পরবর্তীসময়ে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেড-টু, সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি) করা হয়েছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখতে হয় যে স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না।

ডা. জাহিদ আরও জানান, ওনার আরও যে ব্লক আছে, সেটা অ্যাড্রেস করা দরকার, ওনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে, সেটা অ্যাড্রেস করতে হবে। করোনা পরবর্তীসময়ে কিছু জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে এভার কেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া যে চিকিৎসা পেয়েছিলেন তাতে পরিবারের সদস্যরাও সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসক-স্টাফদেরও বিশেষ ধন্যবাদ জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ৭ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছালে পরের দিন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসকদের তাদের প্রাথমিক কার্যকর শুরু করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া যথেষ্ট হাসিখুশি রয়েছেন। তার মনোবল অনেক শক্ত। তিনি দীর্ঘ জার্নি করে আসার পরও বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে না উঠে ছেলে তারেক রহমানের গাড়িতে করেই হাসপাতালে এসেছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার বর্তমান চিকিৎসার অবস্থা নিয়ে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার লিভার সমস্যা জটিলতা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এনজাইমের ভারসাম্য বজায় থাকছে। নিয়মিত মনিটরিং ও চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতাও স্থিতিশীল। নিয়মিত ইনসুলিন ও ওষুধ ব্যবস্থাপনার ফলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। পরিবারের সঙ্গে থাকার ফলে মানসিক শক্তি ও স্বাভাবিক জীবনের অনুভূতি ফিরে পেয়েছেন।

লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা ও সহায়ক পরিবেশ মিলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটছে বলে মনে করছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। দলের নেতাকর্মীরাও অনেকটা তাই মনে করছেন।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির আরও কিছু কারণ রয়েছে বলে জানা যায়। লন্ডনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়া বর্তমানে লন্ডনের একটি আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। তার স্বাস্থ্যের যে দৃশ্যমান উন্নতি ঘটেছে, তার পেছনে রয়েছে একাধিক কার্যকর কারণ ও প্রতিকূলতামুক্ত চিকিৎসা পরিবেশ

আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ও উন্নত যন্ত্রপাতির সহায়তায় সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে লন্ডনে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা-সহায়ক ব্যবস্থা সেখানে সহজলভ্য এবং নিয়মিত ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রিত, ঠান্ডা ও দূষণমুক্ত আবহাওয়া তার শরীরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘদিন পর সন্তান ও নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারায় তিনি মানসিকভাবেও অধিকতর প্রফুল্ল রয়েছেন।

বাংলাদেশে চিকিৎসায় যে সীমাবদ্ধতা ছিল

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা মূলত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (আগের বিএসএমএমইউ) ও পরে বেসরকারি এভার কেয়ার হাসপাতালে হয়। তার চিকিৎসায় ছিলেন দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ চিকিৎসক। তবে কিছু ওষুধ, নির্দিষ্ট কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতির কারণে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছিল না।

লন্ডনের আধুনিক ও উচ্চমানের হাসপাতালগুলোতে খালেদা জিয়ার জন্য আছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল, উন্নত পরীক্ষাগার সুবিধা, ওষুধের পূর্ণ প্রাপ্যতা এবং আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পরিবেশ।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন