রাজশাহী : বাঙালিকে একটি সমৃদ্ধ ও স্বাধীন জাতি হিসেবে যে মানুষটি গড়ে তুলেছেন, সেই মানুষ তথা গোটা বাঙালি জাতির আদর্শের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই মানুষটিকে তার নেতৃত্বের গুণে সম্মান দিয়েছে গোটা পৃথিবী। আর সেই সম্মানের কিছু খণ্ড খন্ড চিত্র নিয়ে শুরু হলো আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘শ্রদ্ধা’।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে (সোমবার) ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্বিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ মিনার চত্বরে। প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পর আলোকচিত্র পরিদর্শন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এর আগে শনিবার দুপুরে রাবি ড. এম ওয়াজেদ মিয়া, চতুর্থ বিজ্ঞাণ ভবনের প্রকৌশল অনুষদ গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, কালের বিবর্তনে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে। প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইল আমাদের জীবন সহজ করে দিলেও, তথ্য আদান প্রদান এবং যোগাযোগ সহজ করলেও আমাদের কাছ থেকে কেড়েও নিয়েছে অনেক কিছু। এদিক থেকে আমরা যা হারিয়েছি, তা অনেক। আমাদের শৈশব-কৈশর যেমন ছিল, সাংস্কৃতিক আবহ, আড্ডা, পারিবারিক পরিবেশে গল্প করা, বই পড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড; সেগুলো এখন হারিয়ে গেছে। এখন মোবাইলের আবর্তনে আমরা একসঙ্গে বসে থাকলেও গল্পের পরিবর্তে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এই জায়গা থেকে ফিরে আসার মূখ্য উপাদান হলো সাংস্কৃতিক আবহ এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা। আর সেই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে ফটোগ্রাফার ফোজিত শেখ বাবু’র আলোকচিত্র প্রদর্শনী “শ্রদ্ধা”তে।
অনুষ্ঠানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাঙালিকে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যিনি নেতৃত্ব দিলেন তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিবের অস্তিত্ব আর ভালোবাসা না থাকলে বাঙালি জাতি আজ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারত না। বাঙালি জাতি হতে পারত না। পারত না ইতিহাসের গতিধারা বদলিয়ে দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে। মুজিব বাঙালিকে প্রকৃত বাঙালি হতে শিক্ষা দিয়েছেন। তারই রূপ প্রকৃতি বিদেশে কেমন, বিদেশী নাগরিকরা বঙ্গবন্ধুকে কিভাবে শ্রদ্ধা করে, তারই রূপ উঠে এসেছে এই প্রদর্শনীতে।
বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যের প্রতি বিদেশি নাগরিকদের সম্মান প্রদর্শনের ছবি নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফটোগ্রাফার ফোজিত শেখ বাবু’র আলোকচিত্র প্রদর্শনী “শ্রদ্ধা”। ফোজিত শেখ বাবু জানান, ২০১৪ সালে পূর্ব লন্ডন শহরের টাওয়ার হ্যামলেটে উদ্বোধন হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নান্দনিক আবক্ষ ভাষ্কর্যটি। লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষ্কর্য ঘিরে গড়ে উঠেছে বিদেশি বন্ধুদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মেলবন্ধন। তারা সিডনি স্ট্রিটে এসে ভাষ্কর্যটি দেখে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠছে, বিদেশি বন্ধুরা ভাষ্কর্যটির সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অনুসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি “শ্রদ্ধা” সম্মান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আমি রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর দুঃখ দুর্দশার চিত্র নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করতে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে যায়। প্রদর্শনী চলাকালীন সময় সিডনিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যটির সামনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করি। এসময় আবক্ষ ভাষ্কর্যটি ঘিরে বিদেশি বন্ধুদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রাকাশ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তার কিছু ছবি তুলি। সেসব ছবি নিয়েই এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
উদ্বোধনের পর প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্রেণী পেশার মানুষ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। প্রদর্শনীতে মোট ১৬টি ছবি স্থান পেয়েছে। এই প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, আলোকচিত্রী ফোজিত শেখ বাবু দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে ২৩টি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন।