নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। সবকিছু ঠিক থাকলে আজই (৩১ জুলাই) নিষিদ্ধ করা হবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় আইনগত মতামত দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অনু বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। অত্যন্ত সতর্কতা ও গোপনীয়তার সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত এ শাখার কর্মকর্তারা সচিবালয়ে এ বিষয়ে কাজ করেন। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা জানান, গত রাতেই এ-সংক্রান্ত নথি তৈরি করা হয়েছে। আজ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য নথি পাঠানো হবে। অনুমোদন মিললে আজই আদেশ জারি করা হবে। রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বিতর্কিত এ রাজনৈতিক দলের।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নৈরাজ্য এবং প্রাণহানির ঘটনায় দলটির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন জোট। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ১৪ দল নেতাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে যাবে। জুলাই মাসের মধ্যেই সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে বলে বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দল নেতারা জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে একমত হয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। তিনি বলেন, ১৪ দলের এ সিদ্ধান্ত সরকার বাস্তবায়ন করবে।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটির ছাত্রসংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল।
তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।