দশ বছর পর হঠাৎ করে ঢাকায় বড় সমাবেশের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সরকারি অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন ঢাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করেছে জামায়াত। এই সমাবেশের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।
সম্প্রতি গণমাধ্যম তার কাছে জানতে চায় যে, ১০ বছর পর হঠাৎ জামায়াতকে মাঠে কীভাবে দেখা গেল।
প্রশ্নোত্তরে রুমিন বলেন, জামায়াতকে ১০ বছর পর মাঠে দেখতে পারাটা কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক স্পষ্ট করে বলেছেন— এটা আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক কারণেই অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জামায়াতের ব্যাপক সমর্থন আছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন। সামনে আরও কিছু দেখবেন। আরও অনেক কিছু হবে। এ কথা দিয়ে তিনি স্পষ্ট করেছেন— কীভাবে জামায়াত ১০ বছর পর সমাবেশ করতে পেরেছে।
তা ছাড়া খুবই আশ্চর্যের মতোই ছিল। জাতীয় পার্টির সমাবেশ সরিয়ে তাদের জায়গা দেওয়া হয়। এটা করা হচ্ছে নির্বাচনের কিছু দিন আগে । তা হলে নিশ্চয় বুঝতে আর বাকি নেই ।
তিনি আরও বলেন, সরকার নিশ্চিত নয় যে এবারের নির্বাচনে বড় কোনো দল অংশ নেবে কিনা। বিএনপির কথা খুব পরিষ্কার যে, এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার জামায়াতকে কাজে লাগাতে চায়।
যদি জামায়াতকে নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে পারে তা হলে কয়েকটি বিষয়ে সরকার লাভবান হবে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে— এ নির্বাচনটিকে অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি ভারতকে এই বার্তা দেবে যে, তোমরা যদি আমাকে (সরকার) যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিশ্ব থেকে রক্ষা না করো, তা হলে এ দেশে ইসলামি দল ক্ষমতায় আসবে।
জামায়াত বর্তমান অবস্থানে বিএনপি কী বিপাকে পড়ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপি বিপাকে পড়ছে না। তার কারণ হলো— জামায়াতের প্রতিটা দাবির সঙ্গে বিএনপির দাবির মিল রয়েছে। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। আমি বলব, এ দাবিগুলো বাম থেকে আসলে যেমন আমাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে, ঠিক তেমনি ডানপন্থি দলগুলো থেকে আসলে আমাদেরকে শক্তিশালী করে। আমাদের দাবির সঙ্গে যেহেতু অন্যদলগুলো একমত হচ্ছে, এতে আমাদের দাবির যৌক্তিকতা ফুটে ওঠে।
বিএনপির জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোট যেটি নিয়ে আ.লীগ বিভিন্ন কথা বলেছে। বর্তমানে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে থাকতে সন্তুষ্ট, না থাকতে সন্তুষ্ট— এমন প্রশ্নে রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপির অবস্থান খুব স্পষ্ট। বিএনপি এককভাবেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে এরশাদের পতন ঘটিয়ে ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করেছে। জামায়াতের ২০টি আসন না থাকলেও বিএনপি ২০০১ সালে সরকার গঠন করতে পারত। সুতরাং বিএনপি একাই চলেছে। তবে বিএনপির সঙ্গে কেউ থাকতে চায় বা যুগপৎ আন্দোলন করতে চায় তা হলে তাদের স্বাগত জানাব। তার মানে এই নয় যে, কাউকে ছাড়া বিএনপি চলতে পারবে না।
রুমিন বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই— জামায়াতকে নিয়ে পুরোটা সময় আওয়ামী লীগ খেলেছে। জামায়াত কিন্তু আ.লীগের পুরনো বন্ধু। ১৯৮৬ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে যুগপৎ আন্দোলনেও তাদের সম্পর্ক বহু পুরনো। মাঝখানে আ.লীগের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক টানাপোড়েন হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে যোগ দেয়। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের কাছে জামায়াত খারাপ হলো।
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বাজারে দীর্ঘদিন থেকে আ.লীগই ছড়িয়েছে। জামায়াত নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে, হচ্ছে। ২০১৯ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। এটা মামলা বিচারাধীন। আমরা অচিরেই রায় পাব একটা। তার পাঁচ দিনের মাথায় আইনমন্ত্রী বললেন, জামায়াত নিষিদ্ধের কোনো মামলা প্রক্রিয়াধীন নেই। জামায়াতকে নিয়ে মিথ্যাচার করা ও হাতের মুঠোয় রাখা, যখন খুশি তখন ব্যবহার করা। এটি সবসময় আওয়ামী লীগ করেছে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে এক কলমের খোঁচায় নিষিদ্ধ করলেও জামায়াতকে করছে না। কারণ জামায়াতকে তারা ব্যবহার করতে চায়। এবং হাতে রাখতে চায় ।