বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কমে গেছে শরীরের অক্সিজেন। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। দিন দিনে তার শারীরিক অবস্থা জটিল হচ্ছে।
আগের চেয়ে অবনতি ঘটেছে। করোনা রোগের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা জটিলতায় ভুগছেন তিনি। অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে ভেন্টিলেশনেও যেতে হতে পারে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আসুন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমরা সবাই মিলে, আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করি। চিকিৎসার্থে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন কিনা- এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেছেন, তা নির্ভর করছে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও সরকারের সদিচ্ছার ওপর।
সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসক জানান, হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওঠা-নামার কারণে তার সম্পর্কে স্থির কিছু বলা যাচ্ছে না। এ কারণে ডাক্তার বা দলের নেতারা কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। তবে, আশা করা যায় বর্তমানে যে অবস্থায় আছেন- তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। মূলত বয়সের কারণেই খালেদা জিয়া করোনা পরবর্তী জটিলতায় অনেকটাই কাবু হয়ে পড়েছেন।
চিকিৎসকদের সূত্রে আরও জানা গেছে, গত এক বছর ধরেই বেগম খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিল। আগে তাঁর ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮ থেকে ১০ পয়েন্টের মধ্যে থাকতো। কিন্তু গত ২-৩ দিন ধরে সেটা ১৬ থেকে ১৮ পর্যন্ত উঠছে। কখনও-কখনও সেটা ২০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাঁকে আরও কিছু দিন করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখতে হবে।
বর্তমানে তাঁর শরীরে প্রধান দুটি সমস্যা রয়েছে। একটি হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, আরেকটি হচ্ছে ডায়াবেটিস। কোভিড আক্রান্ত সব রোগীর কম-বেশি শ্বাসকষ্ট হয়েই থাকে। এ ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষ হিসেবে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট একটু বেশি। কোভিডের কারণেই ডায়াবেটিস কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে।
খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর নিয়মিত বিএনপি ও তাঁর পরিবারকে জানানো হচ্ছে। কোন পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকেও আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, সকালে তিনি ডাক্তারদের কাছ থেকে ম্যাডামের চিকিৎসার খোঁজ নিয়েছেন। একজন ডাক্তার তাঁকে বলেছেন যে, ম্যাডামের ফুসফুস থেকে কিছু পানি বের করা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় আগের ওষুধের সঙ্গে নতুন কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক যুক্ত করা হয়েছে। তবে, ডাক্তাররা তাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রেখেছেন। তবে খালেদা জিয়াকে নিয়মিত অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
এর আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। গত সোমবার (৩ মে) সকালে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।