গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে বা থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশি হয়রানির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই আচরণ সরকারের নির্লজ্জতা এবং নিষ্ঠুর অমানবিকতার বহিঃপ্রকাশ।
আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
মান্না বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসেপিয়ারেন্সেস কর্তৃক বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ এবং তাদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের পর সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে কিংবা তাদেরকে থানায় নিয়ে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর করানো সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সম্প্রতি এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর সবুজবাগ থানায়। এই ব্যাপারে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তির ভাই মোহাম্মদ জাহিদ খান গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তার ভাইকে গত ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ১০ জানুয়ারি ২০২২ সবুজবাগ থানা থেকে ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ এসে তার বাবার কাছ থেকে একটি লিখিত কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য চাপ দেয়। যেখানে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তি নিজে আত্মগোপন করেছেন এমন বিষয় উল্লেখ করা হয়।
মান্না বলেন, এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এভাবে সারা দেশে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে জোর করে ইচ্ছাকৃত ভাবে আত্মগোপন কিংবা হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়া শব্দগুলো ব্যবহার করে কাগজে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর আদায় করা চেষ্টা করা হচ্ছে।
মান্না বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ ভোট ডাকাত সরকার ২০০৯ সাল থেকে ব্যাপকভাবে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করে। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই গুম খুনের ঘটনা আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে যখন সারা পৃথিবী স্বৈরাচার সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করছে তখন সরকার এইসব গুমের ঘটনাকে বৈধতা দিতে পুনরায় গুমের শিকার হওয়া পরিবারের প্রতি অমানবিক, নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত আচরণ শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আগেও বলেছি এই সরকারের হাতে দেশের মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। তারা দেশকে এক ভয়াবহ গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেখানে রাষ্ট্র নিজেই জনগণকে জিম্মি করে তাদের সকল সাংবিধানিক, নাগরিক অধিকার এমনকি বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করছে।
যেখানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার বছরের পর বছর ধরে হারানো স্বজনদের ফিরে পাবার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছে, সেখানে এইসব নিরীহ মানুষকে হয়রানি সরকারের নিষ্ঠুরতা এবং হৃদয়হীনতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। আমি অনতিবিলম্বে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি এই ধরনের অমানবিক আচরণ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।