প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেছেন, অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই দাবি জানান। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমলাদের মিষ্টি কথায় ভুলবেন না। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিন। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর সঙ্গে অন্যায় করেছেন, তাঁদের অবিলম্বে জেলে পাঠান। রোজিনার পাশে আমরা সবাই আছি।’
করোনার কারণে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধের সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না। তিনি অন্ধকার ঘরে বিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমলারা তাঁকে অন্ধ করে রেখেছে। এ কারণে একের পর এক ভুল করে তিনি অন্যায় করছেন। ঈদ এমন একটি বিষয়, যখন সাধারণ মানুষ বছরে একবার বা দুবার তাঁদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। কারও কথা না ভেবে আমলাদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী মানুষের বাড়ি যাওয়া নাকচ করেছেন। সে জন্য আন্তজেলা বাস বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমলাদের একাধিক গাড়ি এখানে চলেছে। চিন্তা ছাড়া যানবাহন বন্ধ করায় জনগণের অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর দায়িত্ব কে নেবে?’
নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ করে যেসব ছাত্র জেলে গেছেন, তাঁদের মুক্তিও দাবি করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসদাচরণ করেছেন। অনেক নাটকের পর মধ্যরাতে তাঁকে একটি মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য সাংবাদিকদের মনে ভয় ঢোকানো ও গণমাধ্যমের কণ্ঠকে থামিয়ে দিতেই রোজিনা ইসলামের মতো একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে হেনস্তা করা হয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও রোজিনা ইসলামসহ গ্রেপ্তার সব সাংবাদিক এবং ছাত্র ও যুব নেতাদের মুক্তি দাবি করছি।’
যুব অধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমানের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, যুব অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব মঞ্জুর মোর্শেদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আবদুর রহমান, সদস্যসচিব মো. আরিফ হোসেন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গতকাল সোমবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। পরে রাতে তাঁকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। মধ্যরাতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে রোজিনা ইসলামকে আদালতে নেওয়া হয়। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রোজিনা ইসলাম সাম্প্রতিককালে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন করেছেন। এ কারণে তিনি কারও কারও আক্রোশের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁকে হেনস্তা ও হয়রানির প্রতিবাদে সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো অব্যাহত রেখেছেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেছে।