শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে একজন মানুষ যখন বার্ধক্যে পৌঁছান, তখন অতীতের স্মৃতিগুলো তার চোখের সামনে আরও বেশি করে ভেসে ওঠে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই বিরামহীন চঞ্চল জীবনে। যেখানে দুঃখ-কষ্টের কোনো ছাপ থাকে না। থাকে শুধু অনাবিল আনন্দ আর দ্বিধাহীন ছুটে চলা। এসব হারানো দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আবেগে চোখের কোণে এক ফোটা জল অনায়াসে ধরা দেয়।
ঠিক তেমনি নিজের শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার হাওলাদার হিমাগার চত্বরে শৈশবের বন্ধুদের আয়োজিত মিলনমেলায় উপস্থিত হন প্রখ্যাত এই রাজনীতিবিদ। এসময় তিনি হাসি-ঠাট্টায় শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা বলেননি তিনি।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজ ও আইডি থেকে সেই আয়োজনের লাইভ চোখে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বসার স্থানে বসে মাইক হাতে নিয়ে কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য কিংবা পরামর্শ নয়। কেবল স্মৃতিচারণ করেছেন শৈশব-কৈশোরের, স্মরণ করেছেন স্কুল-জীবনের বন্ধুদের। যারা বেঁচে নেই, তাদের কথা বলতেই চোখের কোণে জল গড়িয়েছে। এ আয়োজনের একাধিক ফেসবুক লাইভের কমেন্টবক্সে মানুষের মন্তব্যজুড়ে ভালোবাসা আর শুভেচ্ছার ছড়াছড়ি। স্মৃতির ভেলায় ভেসেছেন কেউ কেউ। কমেন্টেও করেছেন স্মৃতিচারণ।
মির্জা ফখরুল পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে স্মরণ করিয়ে দেন ফেলে আসা দিনের কথা। নিজেই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে শোনান বন্ধুদের। পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া বন্ধুদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কদ্দুস আমাদের মাঝে থেকে অনেক আগেই চলে গেছে। মনোয়ার চলে গেছে, যার সাথে সারাদিনে একবার দেখা না হলে খারাপ লাগতো। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। যারা এখনো বেঁচে আছি, আমরা একটু বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। এই বাঁচাটা হচ্ছে নিজেকে অনুভব করা আমি আছি, আমি বেঁচে আছি।
এ সময় তিনি এমন সুন্দর আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আমরা যারা বেশির ভাগ ঘর থেকে বের হই না, যেমন হুমায়ন স্যার, রবি দা উনারা ঘর থেকে বের হন না। তাদের আমরা আজ আবার ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসে একসাথে করার সুযোগ করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ্। আজ সকালে বন্ধু আনিসুরকে দেখতে গিয়েছিলাম। একেবারেই শয্যাশায়ী। নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে। জানি না আমরা কে কখন চলে যাব। কিন্তু যাওয়ার আগে অন্তত আজকের দিনটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যখন স্কুলে পড়ি খুবই দুষ্টু ছিলাম এবং বখরান সাহেব ছিলেন আমাদের ক্যাপ্টেন। আমরা দুষ্টুমি করতাম আর ক্যাপ্টেন আমাদের নামে হেড স্যার রোস্তম আলীকে নালিশ করলেন। তার কিছুদিন পর হেড স্যার আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। ঘরের ভেতরে লাইন করে দাঁড় করালেন এবং সবাইকে একটা করে বেত দিলেন। আমাদের সেই শৈশব ও স্কুলের জীবন আমি কখনই ভুলতে পারি না। আমার সবসময় মনে হয় সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার পরে বন্ধুদের সঙ্গে রংপুরে এক কাজে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা কী করব, তাই ঠিক করলাম সিনেমা দেখবো। কিন্তু সিনেমা দেখার জন্য তখন আমাদের হাতে টিকিট ছিল না। তারপরেও ভিড় ডিঙিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে সিনেমা দেখেছি। এগুলো আমার কাছে এখনো মধুর স্মৃতি হয়ে আছে।
এসময় কবিতা আবৃত্তির অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, একসময় আবৃত্তি করতাম এখন করি না বক্তৃতা করি। তার পরেও আমি চেষ্টা করব কবিতা আবৃত্তি করার। কারণ একসময় আমিও নাটক করেছি, রং মেখেছি, একসময় নাট্যগোষ্ঠী করতাম। পরে তিনি তার প্রিয় কবিতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ আবৃত্তি করে শোনান বন্ধুদের।