ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখতে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। ঘোষণাপত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বা জনআকাঙ্ক্ষাকে দালিলিক রূপ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, শহীদ মিনারে সব দলমতের মানুষকে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়ক-সহসমন্বয়ক শপথ নেবেন। এ ছাড়া সেখানে ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ দাবি আসবে।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম)।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাদের সিদ্দিকী বলেন, তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) যে ঘোষণাপত্র প্রচার করতে যাচ্ছে তা সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে কোনও কোনও জায়গায়। ভুলভ্রান্তি মানুষের মধ্যে থাকবেই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যারা করেছে তাদের মধ্যেও থাকবে। কিন্তু তারা আন্দোলনের মধ্যে জনগণের যে সমর্থন পেয়েছে সেই সমর্থনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হলে তাদের ভীষণ সংযত হয়ে চলতে হবে। তাদের নষ্ট করার জন্য বহু লোক আছে, কিন্তু আমার মনে হয় না তাদের সততার সঙ্গে সাহায্য করতে ওই পরিমাণ লোক আছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, কোনো দেশ যদি এভাবে চলে, যেভাবে চলছিল; দুদিন আগে হোক আর পরে হোক জুলাই আগস্ট আসবেই। সেদিক থেকে বৈষম্যবিরোধীদের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলে যুগ যুগ জাতির শুভকামনা পাবে।
মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, বহু বছর থেকে আমাদের প্রবাদ আছে আমরা হুজুগে বাঙালি, আমাদের আবেগ বেশি। একটা সময় ছিল, আমরা অন্যের জন্যে জীবন দিতাম। এখন বিজ্ঞানের এই যুগে আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের বিত্ত হয়েছে। কিন্তু চিত্ত আমাদের দুর্বল। স্বাধীনতার সময় আমাদের চিত্ত ছিল সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী।
ছাত্রদের অভ্যুত্থান যদি ব্যর্থ হয় তবে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা যদি বিপথগামী হন তাহলে আজকে যেমন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দিয়ে ঘুরানো হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের আকাশ ভেঙে পড়া, লোকজনের খাওয়া বন্ধ হওয়া, কবর থেকে লাশ ওঠার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রটি ৫ আগস্টেই হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবীপাড়াসহ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দুই হাজারের বেশি শহীদ ও ২০ হাজারের বেশি আহতের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এর বৈধতা নিয়ে (লেজিটিমেসি) প্রশ্ন তুলছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা বিপ্লবের একটিমাত্র ধাপ অতিক্রম করেছি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, এই ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত এই কর্মসূচিকে তাদের ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখতে চায় সরকার।
এব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে, তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটিকে সরকার ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখতে চায়।