গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফার আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি আসবে কি না, তা ভবিষ্যতে জনগণই নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি নেই। ভবিষ্যতে আসবে কি না, এটা বলতে পারব না। প্রয়োজন বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হবে? জনগণই বলে দেবে। জনগণ যদি বলে, এখন হরতাল, তখন চাকা বন্ধ হবে। তবে আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি। ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আবারও রাজপথে কর্মসূচি দেব।’
এ সময় ঢাকা মহানগরে আবারও দুই দিনের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, গ্যাস, বিদুৎ, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরে হবে পদযাত্রা। ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে দুপুর ২টায় গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাব মাঠ থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর-আরামবাগ-ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলা মোড়-পুরানা পল্টন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব গিয়ে শেষ হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে দুপুর ২টায় শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে শুরু হয়ে রিং রোড-শিয়া মসজিদ-তাজমহল রোড-নূরজাহান রোড-বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড মোড়-আল্লাহ করিম মসজিদ হয়ে বছিলা সাতরাস্তা মোড়ে গিয়ে শেষ হবে।
হরতালের কর্মসূচির বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আপনারা আন্দোলন বলতেই হরতাল-অবরোধ? বুঝেন। এটা ঠিক না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখেন। ওখানে হরতাল হয় না। কিন্তু আন্দোলন হয়। রাস্তায় লোক নামে, লাখ লাখ লোক হেঁটে কর্মসূচি পালন করে। ভারতজুড়ে প্রোগ্রাম করল কংগ্রেস। হাঁটল ১৪৯ দিন ধরে। এগুলো তো আন্দোলন। বিএনপি যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে, দেখবেন একদিন জনমত এমন জায়গায় আসবে, তখন ওই হরতাল দিতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি দল তো অলিখিতভাবে, অঘোষিতভাবে হরতাল দেয়। আমরা যখন বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম, তখন তারা তিন দিন আগে থেকে হরতাল দিয়েছে, রাস্তাঘাট, বাস-ট্রাক, স্টিমার-লঞ্চসহ পরিবহণ সব বন্ধ করে দিয়েছে।’
১০ দফার চলমান আন্দোলন কোন পথে যাবে, কোন পর্যায় যাবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল, ভাঙচুর করেছিল। তবে আমরা এটা মনে করি না। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের পরাজিত করব।’
আওয়ামী লীগকে ‘পালটা কর্মসূচি’ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারও তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পালটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র, সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সন্ত্রাসের দল। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, সন্ত্রাস-ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমণ করা, হামলা করতে তারা অত্যন্ত পারদর্শী। ওইভাবে তারা আবারও আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার জন্য পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে।’
শনিবার বিএনপি ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করে। অভিন্ন দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকে উসকানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই সংঘাত এড়িয়ে চলেছি। আওয়ামী লীগ আবার পালটা কর্মসূচি দিয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। এবার প্রথম আমরা আওয়ামী লীগকে রিঅ্যাক্ট করতে বাধ্য করছি। এটা নতুন একটা ফ্যানোমেনা। অর্থাৎ তারা ভীত, সন্ত্রস্ত। তারা এখন নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে অপকৌশল নিয়েছে।’
সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সভায় তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক মানুষের প্রাণহানিতে দেশ দুটির সরকারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনিভাবে ব্যবহার এবং ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গায় ১৪টি মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানানো হয় সভায়।’
সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত আলোচনাসভায় খসড়া ‘তথ্য সংরক্ষণ আইন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে, প্রস্তাবিত আইন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মুক্ত ব্যবসার পরিপন্থি। কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে একের পর এক নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশকে পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, মাহবুবুল হক নান্নু ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।