শফিক আহমেদ সাজীব: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকতাকে সমূলে বিনাশ করতে হলে এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের চিরতরে বর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন কারা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজনীতি করে। যারা রাষ্ট্রটাই চায়নি, একাত্তর সালে যারা ফতোয়া দিয়েছিল, হিন্দুরা গণিমতের মাল, সেই জামাত ইসলাম বিএনপির প্রধান সহযোগী। তাদের যে ২২ দলের রাজনৈতিক জোট, সেখানে বহু দল আছে যাদের নেতারা আফগানিস্তান গিয়েছিল। তারা স্লোগান দেয়, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।’
শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ২০০৩ সালে বাঁশখালীর সাধনপুরে সংখ্যালঘু পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তিনজনের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ৪৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সময় সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং যুব সংগঠনকে যুবকল্যাণ তহবিলের অনুদানের চেকও বিতরণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর সমগ্র দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি তাণ্ডব চালিয়েছে। সেই তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে সারাদেশ থেকে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা কোটালি পাড়া থেকে শুরু করে বরিশালের বানারি পাড়া, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে বাড়ি দখল করে রাতারাতি সেই বাড়ির মধ্যে পুকুর খনন করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের অপরাধ ছিল তারা অসাম্প্রদায়িক দল আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। বাঁশখালীতেও একই অপরাধে তৎকালীন সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় বিএনপি নেতা আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অগ্নিকাণ্ড ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেদিন সংসদ সদস্যের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান এই দেশে থাকতে পাওে না, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সমূলে বিনাশ করতে হবে, তাহলে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িকতার কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র আজকে এগুতে পারছে না। যেখানেই সাম্প্রদায়িকতা আছে সেখানেই রাষ্ট্র এগুতে পাওে না।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচনার জন্য বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে জাতির পিতা বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। সুতরাং এই রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০৩ সালে তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাঁশখালীতে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার পর ছুটে গিয়েছিলেন, আমি নিজেও তখন সাথে ছিলাম। সেই দৃশ্যের কথা এখনো আমার মনে আছে। তিনি তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমি ক্ষমতায় গেলে আপনাদের জন্য যতদূর সম্ভব করব। তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।
তিনি বলেন, আদালতের মারপ্যাঁচ ও বিএনপির অনীহাসহ সবকিছু মিলিয়ে আমরা সরকার গঠনের পরও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে ৪০ বছরের মতো সময় লেগেছে। বাঁশখালীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও এত দীর্ঘসূত্রিতা কাম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউমিনিটি উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানেই মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে সরকারে থাকেন বা না থাকেন তিনি সেখানে ছুটে গেছেন। মায়ানমারের শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশের দুয়ার খুলে দিয়েছেন। প্রায় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা রিফিউজি এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। খাদ্য, চিকিৎসাসহ তাদেরকে সমস্ত সুুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য দেশ শুধু উপদেশ দেয়। আশপাশের দেশগুলো থেকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে তাদের সন্তান সন্ততিদের বাবা-মা’র কাছ থেকে বছরের পর বছর আলাদা করে রাখা হয়েছে। এই ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে মা-বাবাকে আর চিনতে পারছে না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় দেখি পূর্ব ইউরোপে ঢুকতে শরণার্থীদের কিভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শরণার্থীদের থাকার জন্য সুব্যবস্থা করেছেন। এ জন্যই বিশ^ গণমাধ্যম জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মানবতার মা’ উপাধি দিয়েছে।