সরকারকে আর ছাড় দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন এক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে সেই নির্বাচনে আমরা যাব। ব্যর্থ ও দুর্বৃত্ত এই সরকারকে আমরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেব না।’
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে জানিয়ে এর জন্য অভিযুক্তদের দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান মির্জা আব্বাস। বলেন, অন্যথায় দেশের মানুষ আপনাদের রাজপথে পেলে শায়েস্তা করবে।
‘মুরাদের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের আপনাদের কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। আপনাদেরকে আর ছাড় দেওয়া হবে না’—বলেন মির্জা আব্বাস।
বক্তব্যে তারেক রহমানকে কটূক্তির ইস্যু ছাড়াও নির্বাচন ও দুর্নীতি বিষয়ে কথা বলেন মির্জা আব্বাস।
নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে বিএনপির অংশগ্রহণ করেনি জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা সংলাপে যাই নাই। কারণ আমরা নির্বাচন কমিশন মানি না। আমরা চাই এ সরকার থাকবে না। এই সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন এক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে সেই নির্বাচনে আমরা যাব।’
তিনি বলেন, ‘সিইসি বলেছেন বিএনপিকে বারবার সংলাপে ডাকব। আমরা আপনাকে সাধুবাদ জানাই। বিএনপিকে বারবার ডাকবেন এই কারণে যে বিএনপিকে ছাড়া আপনারা নির্বাচন করতে পারবেন না। আপনি সিইসি দূরের কথা, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করার সাধ্য বাংলাদেশের কারো নাই। দেশে কিংবা বিদেশে ব্যর্থ ও দুর্বৃত্ত এই সরকারকে আমরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেব না।’
সিইসি বলেছেন বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন বিএনপি নির্বাচনের না এলেও নির্বাচন হবে—এ প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না এই কথা এদেশের মানুষ বুঝে। নির্বাচন কমিশন সিইসি বুঝে। কিন্তু এই সরকার বুঝে না।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, যথেষ্ট হয়েছে- এখন বাংলাদেশের মানুষকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দেন। ক্ষমতা ছাড়েন নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন, তারপর যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন, আমরা আপনাদেরকে মাথায় তুলে নাচবো, কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা থাকবেন এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মানবে না।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারেক রহমানকে বকা দেন-গালি দেন দিতে থাকেন। কিন্তু সময় পেলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না, এ কথাটা মনে রাখবেন। ঢাকা শহরে আন্দোলনের যে জোয়ার উঠেছে আগামী দিনে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সেই আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করে কটূক্তি করা আওয়ামী লীগের একটা স্বভাবগত কৌশল। যখন মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, পানি পাচ্ছে না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বন্যায় দেশ ডুবে যাচ্ছে ওই সময়ে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে একটি কথা বলে দিল। যাতে করে আমরা ওই দিকে নজর দিয়ে দিই। মানুষ এত বোকা নয়, আজে বাজে কথা বলে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো যাবে না।’
‘ইতিপূর্বে আপনারা বলেছেন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা নেই। এখন আবার পানির মূল্য বৃদ্ধি, তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ আমরা যতটুকু জানি সরকারি পর্যায়ে কখনো এসবের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় না, বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে মূল্য বৃদ্ধি করে। অথচ অনির্বাচিত এই সরকার সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি করছে।’
এই দেশের মানুষ আর এই সরকারকে চায় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে পানিতে চুবিয়ে মারা হচ্ছে। আবার কখনো তিস্তার ব্যারেজ খুলে দেওয়া হচ্ছে, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমরা কখনো পানিতে ডুবে মরি কখনো খরায় ডুবে মরি। অথচ এই ব্যাপারে সরকারের কোনো কথাবার্তা নাই।’
সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে লুটপাট চালাচ্ছে দাবি করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পদ্মা সেতু ৩৩ হাজার কোটি টাকায় শেষ করা হয়েছে। এখন আবার মেট্রো রেল নিয়ে উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আবারও ৩৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাইতেছে। প্রশ্ন করতে চাই পদ্মা না হয় খরস্রোতা নদী পিলারের নিচে মাটি সরে গিয়েছিল ঢাকা শহরেও কি পাইলিং এর নিচে মাটি সরে যাচ্ছে নাকি? আবার মেট্রো রেলের খরচ বেড়ে গেল।’
আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, ইশরাক হোসেন প্রমুখ।